রহিমার টক খাবার খুব প্রিয়। সে
যখন গর্ভবতী হয় তখন একদিন তেঁতুলের সাথে মিশিয়ে কাঁচা পেঁপে খেল বেশ ভালো
পরিমানেই। খাওয়ার পর পরই তার পেটে ব্যথা শুরু হল এবং গর্ভপাত হয়ে গেল।
হ্যাঁ এই রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায় অনেক সময়ই অজ্ঞতার কারণে। তাই গর্ভাবস্থায়
একজন নারীর কী খাওয়া উচিৎ এবং কী খাবার বাদ দেয়া উচিৎ তা জানা থাকতে হয়।
সুস্থ থাকার জন্য সব সময়ই সুষম
খাদ্য খাওয়া উচিৎ। কিন্তু গর্ভাবস্থার জন্য এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভের
শিশুটি যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় তা নিশ্চিত করতে হবে আপনাকেই। তাই পুষ্টিকর
খাবার খেতে হবে হবু মাকে। আবার এমন কিছু খাবার আছে যা গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ
নয়। চলুন তাহলে জেনে নিই গর্ভাবস্থায় একজন নারীর কি ধরণের খাবার খাওয়া উচিৎ এবং কোন
খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ এই বিষয়ে।
প্রেগন্যান্ট
অবস্থায় যে খাবারগুলো খাওয়া উচিৎ :
আপনি মা হতে যাচ্ছেন তাই এখন থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে অব্যশই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি ও আপনার শিশু খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুস্টি পাচ্ছেন কিনা।আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় অবশ্যই নিচের চার ধরনের পুস্টিকর খাবার থাকতে হবে।
· শাক সবজি ও ফলমূল: প্রতিদিনের খাবারে তাজা শাক সবজি ও ফলমূল অব্যশই থাকা উচিত।
· স্টার্চ জাতীয় খাবার: ভাত, রুটি ও আলু জাতীয় খাবার
· প্রোটিনযুক্ত খাবার: মাছ, মাংস, ডিম ও ডাল হল প্রোটিনের ভাল উৎস।এছাড়া সামুদ্রিক মাছে পাওয়া আয়োডিন যা বাচ্চার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
· ডেইরি ফুড: এগুলো হল দুধ, দই ও দুধ দিয়ে তৈরী খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে।
ফল ও শাকসবজি: দিনে ৫ বার ফল ও ৭ বার সবজি
খাওয়ার চেষ্টা করুন। ফলের চেয়ে শাকসবজি বেশি খান। জুস ও স্মুদি ও পান করতে পারেন।
তবে এগুলোর সুগার ব্লাড সুগার লেভেল বৃদ্ধি করতে পারে এবং দাঁতেরও ক্ষতি করতে
পারে। তাই এগুলো সীমিত পরিমাণে পান করাই ভালো। তাজা ফল ও সবজি খাওয়াই বেশি স্বাস্থ্যকর।
স্টার্চ জাতীয় খাবারঃ আলু, লাল চালের ভাত, রুটি, পাস্তা ইত্যাদি স্টার্চ জাতীয় খাবার আপনার
প্রাত্যহিক খাদ্যতালিকায় রাখুন। শর্করা জাতীয় খাবার শরীরে এনার্জি প্রদানে সাহায্য
করে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ চর্বিহীন মাংস, মুরগী, মাছ,
ডিম, ডাল (মটরশুঁটি, মসূর
ডাল) ইত্যাদি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান। সপ্তাহে ২ দিন বা তারচেয়েও বেশি মাছ
খাওয়ার চেষ্টা করুন। সারডিন, স্যামন এর মত তৈলাক্ত মাছ বা
সামুদ্রিক মাছ সপ্তাহে ১ দিন খেতে পারেন। আমিষ জাতীয় খাবার গর্ভের শিশুর শরীরের
নতুন টিস্যু গঠনের জন্য সাহায্য করে।
দুগ্ধজাত খাবারঃ দুধ, পনির, দই
ইত্যাদি খাবারগুলো ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। এগুলোর চিনি ও ফ্যাটের পরিমাণ যেন কম
থাকে সেটি খেয়াল করতে হবে। ফ্যাট জাতীয় খাবার শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে সাহায্য
করে।
অনেক মানুষের শরীরেই আয়োডিনের
ঘাটতি থাকে। আয়োডিন এমন একটি খনিজ উপাদান যা শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের জন্য
অপরিহার্য। দুগ্ধজাত খাবার ও সামুদ্রিক খাবার আয়োডিনের চমৎকার উৎস।
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর অনেক
বেশি কাজ করে। তবে সাধারণত প্রথম ৬ মাসে বাড়তি ক্যালোরির প্রয়োজন হয়না। সবচেয়ে
ভালো উপায় হচ্ছে যখনই ক্ষুধাবোধ হবে তখনই খাবেন।
ক্যালসিয়াম :শিশুর হাড়ের গঠনে এবং মায়ের হাড়ের ক্ষয়রোধে
নিয়মিত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে। ক্যালসিয়াম হাড় গঠন ছাড়াও গর্ভাবস্থায় উচ্চ
রক্তচাপের সমস্যা হলে তা দূর করে। গর্ভাবস্থায় এবং শিশু জন্মের পর- প্রতিদিন
অন্ততপক্ষে ১০০০ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হবে। একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে অন্তত ৩
গ্রাম লো-ফ্যাট দুধ খাওয়া উচিত। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার হলো দুধ, ডিম, দই, সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, পালংশাক,
ব্রকলি, গোশত প্রভৃতি।
আয়রন বা লৌহজাতীয় খাদ্য :গর্ভস্থ শিশুর জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং
শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ২৭ মিলিগ্রাম আয়রনজাতীয়
খাবার খেতে হবে। আয়রনজাতীয় খাবারের উল্লেখযোগ্য উৎস হচ্ছে- ডিমের কুসুম, ডাল, মাছ, কলিজা, মুরগির গোশত, ব্রকলি,
পালংশাক, কুমড়া, সয়াবিন,
মিষ্টি আলু, আঙুর, কমলা,
তরমুজ, বাদাম প্রভৃতি।
ভিটামিন সি : গর্ভবতী একজন মহিলার দিনে ৭০ মিলি গ্রাম, ভিটামিন সি প্রয়োজন। দিনে অন্তত একটি ভিটামিন
সি-যুক্ত ফল বা সবজি খেতে হবে। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে আছে- লেবু,
পেয়ারা, আমলকী, কমলা,
স্ট্রবেরি, পেঁপে, ফুলকপি,
ব্রকলি, ক্যাপসিকাম, টমেটো
প্রভৃতি। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন সি জরায়ুর সঙ্কোচন ঘটায় এবং শিশুর গঠন ব্যাহত করে।
এসিড : একজন
গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন ০.৪ মিলি গ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন। ফলিক এসিড নিউরাল
টিউবের কোষ অসঙ্গতি (যেমন- Spina bifida) থাকলে তা দূর করে। ফলিক এসিডের উল্লেখযোগ্য উৎস হচ্ছে- পালংশাক, লেটুসপাতা, ব্রকলি, কমলা,
কলা, মুরগির কলিজা, টমেটোসহ
সবুজ শাকসবজি।
ভিটামিন এ : প্রতি একদিন পরপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন এ
খেতে হবে। তবে অতিরিক্ত ভিটামিন এ (>১০০০০ আইইউ/দিন) খেলে ভ্রুণের গঠন ব্যাহত হতে পারে। ভিটামিন এ-যুক্ত খাবার
হচ্ছেÑ গাজর, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, যেকোনো সবুজ শাক, লালশাক
প্রভৃতি।
ক্যালরিযুক্ত খাদ্য : একটি সুস্থ শিশু জন্মদানের জন্য অতিরিক্ত
প্রায় ৫৫ হাজার ক্যালরি প্রয়োজন। অর্থাৎ গর্ভবতী মাকে দিনে অতিরিক্ত ৩০০ ক্যালরি
গ্রহণ করতে হবে।
পানি ও পানিজাতীয় খাবার : গর্ভাবস্থায় বেশি বেশি পানি ও
অন্যান্য তরল দ্রব্য গ্রহণ করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীরে রক্তের পরিমাণ
বৃদ্ধি পায়। রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান মায়ের শরীর থেকে
শিশুর শরীরে পৌঁছায়। পানি ছাড়াও অন্যান্য তরল খাদ্য যেমনÑ ফলের রস, দুধ
ইত্যাদি নিয়মিত খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় ১০টি সুপার ফুড
গর্ভাবস্থায় মায়ের শরীর আগের তুলনায় অনেক বেশী কাজ করে। তবে সাধারণত প্রথম ছয় মাসে বাড়তি ক্যালরির দরকার হয় না।সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে যখনই ক্ষুধা বোধ হবে তখনই খাবেন।প্রথম কয়েক সপ্তাহে বমি ভাব ও দুর্বলতার কারণে খাবারে অরুচি দেখা দিতে পারে এক্ষেত্রে অল্প অল্প করে বারবার খাওয়া উচিত। এই ১০টি খাবা্রে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি যা মা ও শিশুকে সুস্থ রাখবে।
ডিম: ডিম শিশুর মস্তিকের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং জন্মগত ত্রুটি দূর করে ।গর্ভাবস্থায় সিদ্ধ ডিম খাওয়া ভাল।আর কেউ যদি ওমলেট বা ডিম পোচ খেতে চান তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে ডিম যেন কাঁচা না থাকে।
মিষ্টি আলু: মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার, ভিটামিন বি৬, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং আয়রন ।এগুলো শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় । এছাড়া এতে রয়েছে কপার যা শরীরে আয়রন দ্রুত শোষন করতে সাহায্য করে।মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে বা বেক করে খেতে পারেন । এছাড়া ফ্রেন্স ফ্রাইয়ের মত করেও খেতে পারেন ।
বাদাম: বাদামে রযেছে ওমেগা-৩, প্রোটিন, ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল।এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা প্রিম্যচিউর ডেলিভারির ঝুঁকি কমায় ও শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে সাহায্য করে ।
শস্য ও ডাল: শস্য ও ডাল থেকে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও আয়রন পাওয়া যায় । এছাড়া জিংক ও ক্যালসিয়ামও পাওয়া য়ায় ।
চর্বি ছাড়া মাংশ: মাংশ থেকে পাওয়া যায় প্রোটিন ও আয়রন ।যা শিশুর মস্তিকের বিকাশে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখে।
কমলার রস : এক গ্লাস কমলার রস থেকে আপনি প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি পাবেন । যা শিশুর দাতঁ ও হাড়ের গঠনকে মজবুত করবে।
দই : দই এ দুধের চেয়ে বেশী ক্যালসিয়াম থাকে । এছাড়া এতে ভিটামিন বি এবং জিংক রয়েছে । একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমানে ক্যালসিয়াম গ্রহন করতে হবে ।ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ফলে জন্মের সময় শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মাতে পারে এবং মা পরবর্তীতে হাড়ের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে পারে ।
ওটামিল: ওটস এ প্রচুর পরিমানে ফাইবার, প্রোটিন এবং ভিটামিন বি৬ থাকে । সকাল বেলাটা একবাটি ওটামিল খাওয়া শুরু করতে পারে এতে করে সকালের বমি ভাবটা একটু কমতে পারে । গর্ভাবস্থায় অনেকে কোস্ঠকাঠিন্যে ভুগে থাকেন । ওটস এর প্রচুর ফাইবার আপনাকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে । ওটস বিভিন্ন সুপার শপ এবং দোকানে কিনতে পাওয়া যায় ।
সবুজ শাকসবজি: শাক সবজি নিয়ে বলার তেমন কিছুই নেই । এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা বাচ্চা ও মা দুই জনকেই সুস্থ রাখবে ।
মাছ: বিভিন্ন ধরনের মাছ আপনার খাবারের মেন্যুতে রাখা উচিত । মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড ও প্রোটিন ।
প্রেগন্যান্ট
অবস্থায় যে খাবারগুলো খাওয়া উচিৎ নয় :
ডিম বা ডিমের কুসুম পুরোপুরি সিদ্ধ করে খেতে হবে। আধা সিদ্ধ বা কাচা ডিম খাওয়া উচিত নয়।যেকোন মাংস ভালভাবে রান্না করে খেতে হবে।কাচা মাংস বা আধা সিদ্ধ মাংস দিয়ে তৈরী খাবার খাওয়া উচিত নয়। খুব বেশী মুরগির বা গরুর কলিজা খাওয়া ঠিক না। দিনে এক বা দুই কাপের বেশী কফি বা চা পান করা ঠিক না। ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
কাঁচা ডিমঃ ডিম পুষ্টিকর একটি খাবার।
অনেকেরই কাঁচা ডিম খাওয়ার অভ্যাস থাকে। কিন্তু গর্ভাবস্থায় কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে
বিরত থাকতে হবে। কারণ কাঁচা ডিমে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ডিম
ভালোভাবে সিদ্ধ না করে খাওয়া যাবেনা।
অর্ধসিদ্ধ মাংসঃ অর্ধসিদ্ধ মাংসে ব্যাকটেরিয়া
থাকতে পারে। প্যাকেটজাত মাংস যেমন- সসেজ খাওয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। মাংস ভালো
ভাবে সিদ্ধ করে রান্না করতে হবে।
অপাস্তুরিত দুধঃ অপাস্তুরিত দুধ বা কাঁচা দুধে
লিস্টেরিয়া নামক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তাই ভালো করে না ফুটিয়ে দুধ পান করা যাবেনা।
অপাস্তুরিত দুধ দিয়ে তৈরি খাবার যেমন- নরম পনির খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
কলিজা ও কলিজার তৈরি খাবারঃ লিভারে রেটিনল থাকে যা একটি
প্রাণীজ ভিটামিন এ। এর অতিরিক্ততা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ক্যাফেইনঃ কফি ক্লান্তি দূর করার জন্য
কার্যকর হলেও গর্ভাবস্থায় এর পরিমাণ কম করতে হবে। চা, কফি ইত্যাদিতে ক্যাফেইন থাকে।
দৈনিক ২০০ গ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করা ঠিক নয়। অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে
কম ওজনের শিশু জন্ম গ্রহণ করে। মিসক্যারেজের মত ঘটনাও ঘটতে পারে।
সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছ স্বাস্থ্যের জন্য
উপকারী। কিন্তু অধিক পরিমাণে খেলে গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। কারণ
সামুদ্রিক মাছে পারদ জাতীয় পদার্থ থাকে।
কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপেঃ গর্ভবতী মহিলাদের জন্য
কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে খাওয়া বিপদজনক। এতে গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটতে পারে।
Harvard School of
Public Health প্রেগনেন্ট নারীদের
জন্য হার্ভার্ড হেলথি ইটিং প্লেট নামে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা আস্ত শস্যদানার খাবার খাওয়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ
করেছে। স্বাস্থ্যকর ভেজিটেবল ওয়েল গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সীমিত পরিমাণে অর্থাৎ দিনে ১/২
বার খাওয়ার জন্য বলা হয়। লাল মাংস সীমিত পরিমাণে এবং প্রসেসড মিট এড়িয়ে যাওয়ার
পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও রিফাইন্ড শস্য দিয়ে তৈরি সাদা পাউরুটি ও সাদা চালের ভাত
এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার কথা বলা হয়েছে এবং
চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়া
হয়েছে।
কাঁচা
ডিম
ডিম প্রোটিনের প্রধান উৎস। গর্ভবতী মহিলাদের প্রতিদিনের খাদ্য
তালিকায় একটি ডিম রাখা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
কাঁচা ডিমে আছে সালমোনেলা নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার যা জ্বর,বমি
বমি ভাব,ডায়রিয়া্র মত রোগের কারণ হতে পারে। ডিম ভালভাবে
রান্না করে খেতে হবে যাতে ব্যাকটেরিয়ার ধবংস হয়ে যায়।
পনির
নরম পনির, যা অপ্রাস্তুরিত দুধ দিয়ে তৈরি তা
খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। অপ্রাস্তুরিত দুধে লিসটারিয়া নামক ব্যাকটেরিয়ার,
যা মা এবং শিশু এর স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকারক। ডিম থেকে তৈরি ঘরে
বানানো মেয়নেজও স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অপাস্তরিত দুধ মা ও শিশুর জন্য
ক্ষতিকর। ভালোভাবে দুধ ফুটিয়ে খেতে হবে।
কাঁচা
বা আধা সিদ্ধ মাংস
কাঁচা বা আধা সিদ্ধ মাংস খাওয়া যাবে না।এমন কি প্যাকট জাত মাংসের
খাবার যেমন সসেজ,সালামি,পেপারনি
ইত্যাদি খাওয়ে থেকে বিরত থাকত হবে। ১৪৫ ডিগ্রী তাপমাত্রায় মাছ, মাংস রান্না করতে হবে।
অপ্রাস্তুরিত
ফলের রস
ফ্রেস জুস বা অপ্রাস্তুরিত ফলের রসে ই কোলাই, সালমোনেলা
নামক কিছু ব্যাকটেরিয়ার থাকে যা গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্য এর জন্য ক্ষতিকারক।
সুশি
জাপানিজ এই খাবারটি অনেকের কাছে খুব প্রিয়। তাদের এই প্রিয়
খাবারটিকে ও খাদ্যের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এতে ব্যবহৃত আধা সিদ্ধ মাংস বা
সামুদ্রিক মাছে আছে যা ব্যাকটেরিয়ার আছে তা অনেক রোগের কারণ হতে পারে।
কফি
কফি ক্লান্তি দূর করার জন্য সবচেয়ে কার্যকর। এই কফি খাওয়া কমিয়ে
দিতে হবে গর্ভকালীন সময়ে। কফিতে থাকে ক্যাফিন নামক উপাদান থাকে,যা অতিরিক্ত পান করার ফলে মিসক্যারেজের মত ঘটানা ও ঘটতে পারে। প্রতিদিন
২০০ মিঃগ্রা এর চেয়ে কম ক্যাফিন খাও্য়া যেতে পারে। এক কাপ কফিতে থাকে ৯৫ মিঃগ্রা
ক্যাফিন আর এক কাপ চায়ে থাকে ৪৭ মিঃগ্রা ক্যাফিন।
এলকোহল সমৃদ্ধ খাবারঃ এটি আপনার আনাগত সন্তানের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন ব্রেইন,নার্ভ ইত্যাদি তৈরিতে বাধাঁ সৃষ্টি করে। শুধু এলকোহল নয় যে সকল খাবারে
এলকোহল থাকে তা খাওয়া থেকে ও বিরত থাকতে হবে।
অপ্রাস্তুরিত বা কাঁচা দুধঃ অপ্রাস্তুরিত বা কাঁচা দুধ অথবা কাঁচা দুধের তৈরি খাবার খাওয়া থেকে
বিরত থাকতে হবে। দুধ ভালভাবে ফুঁটিয়ে তারপর তা পান করতে হবে।
কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপেঃ কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অনেক ক্ষতি কারক।
কাঁচা পেঁপেতে ল্যাকট্রিক্স নামক একটি উপাদান আছে যা গর্ভপাতের মত ঘটনা ঘটাতে
পারে।
আঙ্গুরঃ আঙ্গুর যাদের প্রিয় তাদের জন্য বলছি গর্ভকালীন অবস্থায় আঙ্গুর খাওয়া
থেকে দূরে থাকুন। আঙ্গুর আপনার স্টোমাককে গরম করে ডারিয়ার মত রোগ হতে পারে। তাই
প্রিয় ফলকে ৯ মাসের জন্য দূরে রাখুন।
স্যাকারিন : গর্ভাবস্থায় স্যাকারিন গ্রহণ করা উচিত নয়। স্যাকারিন প্লাসেন্টা
ভেদ করে ভ্রƒণের শরীরে পৌঁছায় এবং ভ্রুণের
টিস্যুতে জমা হয়ে থাকে।
অতিরিক্ত ভিটামিন : অতিরিক্ত ভিটামিন ‘এ’ গ্রহণে গর্ভস্থ
শিশুর গঠন বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভিটামিন ‘সি’
জরায়ুর সঙ্কোচন ঘটায়, যা গর্ভাবস্থার শেষ
পর্যায়ে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারে। উচ্চমাত্রার যেকোনো মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করা
থেকে বিরত থাকতে হবে।
আনারস : আনারসে প্রচুর পরিমাণ খনিজ উপাদান ও প্রোটিন থাকে, যা পাকস্থলির বিভিন্ন ইনফেকশন দূর করে। তাতে
গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে আনারস খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। এ ছাড়া আনারসে
ব্রোমেলিয়ান নামক উপাদান থাকে, যা ডায়রিয়ার কারণ হিসেবে
চিহ্নিত হয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে আনারস খাওয়া বর্জন করাই উত্তম।
গর্ভাবস্থায়
নারীদের খাবারের তালিকা কেমন হওয়া উচিৎ তা জেনে নিই চলুন।
এখানে আমরা উদাহরণসরূপ কিছু
আদর্শ খাবার রুটিনের কথা বলব। তবে আপনার বয়স, শারীরিক অবস্থা, ওজন ইত্যাদি
বিবেচনা করে ভাল ডায়েট সাজেশন অবশ্যই আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেবেন।
সকালে – সকালে অনেক গর্ভবতী নারীরই বমি
বমি ভাব হয় এবং খেতে ইচ্ছে করেনা। সেক্ষেত্রে ভারী খাবার না খেয়ে হালকা চা
(গ্রিনটি)ও বিস্কিট খেয়ে নিতে পারেন। এর বেশ খানিকটা পরেই ২ টি রুটি ও সবজি খেতে
পারেন। সাথে একটি ডিম সিদ্ধ করে খাওয়া ভালো। বেলা ১০ টা/ ১১ টায় ১ গ্লাস ননী ছাড়া
দুধ বা ফল বা ফলের জুস ও বাদাম খেতে পারেন।
দুপুরে – দুপুরে ১ বাটি ভাতের সাথে মাছ বা
মাংস, সবজির তরকারী,
শাক, ডাল এবং তাজা ফল ও সবজির সালাদ। খাওয়ার শেষে খেতে পারেন দই।
বিকালে – ভাঁজা-পোড়া খাবার না খেয়ে ঘরে
তৈরি কোন স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক্স বা কেক বা বাদাম বা মটরশুঁটি সিদ্ধ খেতে পারেন। ফল
বা ১ গ্লাস ফলের জুস খেতে পারেন।
রাতে – রাতের খাবার দুপুরের মতোই হবে।
তবে শাক রাতে না খাওয়াই ভালো। বেশি করে সবজির তরকারী খেতে পারেন। ঘুমাতে যাওয়ার
আগে ১ গ্লাস ননী মুক্ত দুধ পান করতে ভুলবেন না।
যাদের ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্ত
চাপের মত সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের দেয়া তালিকা অনুযায়ী খাবার খাবেন। ডায়েবেটিসের
রোগীরা শর্করা ও মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে যেতে হবে এবং ব্লাড প্রেশারের রুগীদের
লবণ খেতে হবে কম করে।
গর্ভাবস্থায় ডায়েট
গর্ভাবস্থায় ডায়েট করা উচিত না এতে করে আপনার শরীর পুস্টিহীনতায় ভুগতে পারে।গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া ভাল লক্ষন কিন্তু আপনার ওজন যদি খুব বেশী বেড়ে যায় তাহলে খাবারের তালিকা থেকে চিনি ও চর্বি যুক্ত খাবার বাদ দিন ও হালকা ব্যায়াম করুন। তবে তার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
গর্ভাবস্থায় ওজন কতটুকু বাড়বে
ধীরে ধীরে ওজন বাড়া সবচেয়ে ভাল।সাধারণত গর্ভাবস্থায় ওজন ১০-১২ কেজি বাড়তে পারে।
দিনে কত বার খাবেন
নিয়মিত খাবার খাবেন। তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি ৩-৪ বার হালকা নাস্তা করতে পারেন। যদি খাবারে অরুচি বা বদহজম হয় তাহলে অল্প অল্প করে বারবার খাবেন।