ব্জ্র্যপাত একধরনের দুর্যোগ, প্রতিবছর বাংলাদেশে বিশেষ করে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে এই কারনে অনেক মানুষ মারা যায়, একটু সচেতন হলে যার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেইবার বজ্রপাতে ১৭ জন প্রাণ হারান।
বিজ্ঞানীরা অনেকে মনে করেন বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এটি বেশি হচ্ছে। তবে অনেক বিজ্ঞানীই আবার এ মতের সঙ্গে একমত নন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই তাপমাত্রা বেড়েছে এবং এর কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। সকালের দিকে প্রচণ্ড তাপমাত্রা হয়। আর তখন এটি অনেক জলীয় বাষ্প তৈরি করে। এ জলীয় বাষ্পই বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের প্রধান শক্তি। তাপমাত্রা যত বাড়বে, তখন জলীয় বাষ্প বা এ ধরনের শক্তিও তত বাড়বে।
জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়া মানেই হল ঝড়ের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়া। বছরে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়ার কারণে ১২শতাংশ বজ্র ঝড় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি কোনো কোনো বিজ্ঞানী প্রমাণ করেছেন।
বজ্রপাত কি?
---বজ্রপাত প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য গুলোর মধ্যে একটি। এটি মানুষের পরিচিত সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর একটিও বটে। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রার প্রায় সমান মাত্রার স্ফুলিঙ্গ আর ভয়াবহ গর্জন বহুকাল ধরেই মানুষের পিলে চমকানোর কাজটি দায়িত্বের সাথে পালন করে আসছে।।গ্রীষ্মের প্রথমভাগে বজ্রঝড় কালবৈশাখী নামে এবং বর্ষা ঋতুর শেষভাগে আশ্বিনের ঝড় নামে অভিহিত হয়ে থাকে।কিভাবে বজ্রপাত তৈরী হয়?
---উত্তপ্ত ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হয়। উত্তপ্ত বায়ু যখন দ্রুতগতিতে ঠাণ্ডা হয়, তখন বজ্রমেঘের সৃষ্টি হয়। এই বজ্রমেঘের ভেতরে বাতাসের দ্রুতগতির আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এর ফলে বাতাসের জলীয়বাষ্প একই সময়ে বৃষ্টিকণা, শিশিরবিন্দু ও তুষার কণায় পরিণত হয়। বৃষ্টিকণা ও তুষার কণার পারস্পরিক সংঘর্ষের ফলে তুষারের ইলেকট্রন চার্জ ধাক্কা খায়। ফলে স্থির বৈদ্যুতিক চার্জের সৃষ্টি হয়। এই চার্জ সঞ্চিত হয়ে তীব্র শব্দের বজ্রপাত সৃষ্টি করে। যখন বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ উচ্চ তাপমাত্রা সৃষ্টি করে, তখনই তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়। বাতাসের মধ্য দিয়ে দ্রুত প্রবাহিত বজ্রবিদ্যুৎ প্রায় ৩০ হাজার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা উত্পন্ন করে। ফলে বায়ুর দ্রুত প্রসারণ হয় ও তীব্র শব্দের সৃষ্টি হয়।বজ্রপাত থেকে রক্ষায় করণীয়
সম্প্রতি বজ্রপাতে ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদফতর বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে।এই পরামর্শ বা করনীয় যদি মানা যায় তাহলেও অনেক প্রান বেচে যেতে পারে, তবে আসুন জেনে নেই বজ্রপাত থেকে রক্ষায় করণীয়ঃ- খোলা স্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালে বজ্রপাত শুরু হলে একত্রে না থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অবস্থান করুন।
- আকাশে ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে বজ্রপাতের আশংকা তৈরি হয়। ৩০-৪৫ মিনিট বজ্রপাত স্থায়ী হয়, এ সময়ে ঘরে অবস্থান করাই শ্রেয়।
- বজ্রপাতের সময় ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
- ঘনকালো মেঘ দেখা দিলে খুব প্রয়োজন হলে রাবারের জুতা পায়ে বাইরে যাওয়া যেতে পারে।
- বজ্রপাতের সময় সমুদ্র বা নদীতে থাকলে মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন। বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় টিউবওয়েল, রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
- বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, খোলা মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
- বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন।
- এ সময়ে ধানক্ষেত বা খোলা মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি হাঁটু গেড়ে, কানে আঙুল দিয়ে, মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
- কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত বজ্রপাত নিরোধক ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে অবস্থান করুন।
- যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
- বজ্রপাতের সময় মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভি, ফ্রিজসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সুইচ বন্ধ রাখুন এবং বজ্রপাতের আভাস পেলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখুন।
- উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক তার বা ধাতব খুঁটি, মোবাইল টাওয়ার থেকে দূরে থাকুন।
- বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে অবস্থান করলে গাড়ির ধাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
- বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আক্রান্তদের মতো দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে, প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকুন বা হাসপাতালে নিয়ে যান।
- বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না।
- বাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভিতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
-. মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ল্যান্ডফোন, টিভি, ফ্রিজসহ সব বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং এগুলো বন্ধ রাখুন।
-. বজ্রপাতে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যান, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
-. এ সময়ে ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না। প্রয়োজনে প্লাস্টিকের অথবা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
-. খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত থাকুন।
-. বজ্রপাতের সময় ছাউনিবিহীন নৌকায় মাছ ধরতে যাবেন না, তবে এ সময় নদীতে থাকলে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
-. বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
-. প্রতিটি ভবনে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
নিজে সচেতন হোন অন্যকে জানিয়ে সচেতন করুন।সুস্থ্য থাকুন, নিরাপদ থাকুন!
বজ্রপাত থেকে বাঁচার দোয়া
---বজ্রপাত খোদায়ি দুর্যোগ, এর থেকে বেঁচে থাকার কিছু বাহ্যিক করণীয়ও রয়েছে, যা ইদানীংকালে বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তবে হাদিসের পাতায় চোখ বুলালে দেখা যায়, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রিয় নবী (সা.) তাঁর উম্মতদের বিভিন্ন দোয়া শিখিয়েছেন।হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) তাঁর বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) যখন বজ্রের শব্দ শুনতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আ-ফিনা কবলা জালিকা।’ (তিরমিজি : ৩৪৫০)
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, হজরত ইবনে আবি জাকারিয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি বজ্রের আওয়াজ শুনে এ দোয়া পড়বে, ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’, সে বজ্রে আঘাতপ্রাপ্ত হবে না। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ২৯২১৩)
সবচেয়ে বেশী বজ্রপাত হয় কোথায়?
-- স্যাটেলাইট থেকে নেয়া ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে মার্চ থেকে মে—এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জে।দেশের আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহত্তর সিলেট ও হাওর এলাকায় বেশি বজ্রপাত হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের মধ্যাঞ্চলে বজ্রপাত বাড়ছে।
Post a Comment
If you learn something from our post please comment...