রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তালাশ করলেন। পরে তিনি এলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: আবু হুরায়রা। তুমি কোথায় ছিলে?
তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল, আপনার সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি গোসল না করে আপনার সাথে উঠবস করাকে অপছন্দ করেছি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “সুবহানাল্লাহ! মুমিন তো অপবিত্র হয় না।” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম। সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর/৭১০ অধ্যায়ঃ ৩/ হায়েজ)
فيه جواز تأخير الاغتسال عن أول وجوبه
“এ হাদিসে গোসল ফরজ হওয়ার পর তা বিলম্ব করার বৈধতা পাওয়া যায়।” (সহিহ বুখারির ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাতহুল বারী)
عن غضيف بن الحارث، قال: قلت لعائشة: أكان النبي صلى الله عليه وسلم يغتسل قبل أن ينام؟ وينام قبل أن يغتسل؟ قالت: نعم. قلت: الحمد لله الذي جعل في الأمر سعة
গাযীফ ইবনুল হারিস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আয়েশা রা. কে প্রশ্ন করলাম, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি ঘুমের পূর্বে গোসল করতেন অথবা গোসলের পূর্বে ঘুমাতেন?
তিনি বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: আল হামদু লিল্লাহ-সকল প্রশংসা আল্লাহর যিনি বিষয়টিতে ছাড় রেখেছেন। (সহিহ আবু দাউদ, হা/২২৬)
এর কোন নিষিদ্ধ বা নির্ধারিত সময় নেই। বরং আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত স্বরূপ। সুতরাং তোমরা তোমাদের ক্ষেতে যেভাবে ইচ্ছা গমন কর’ (বাক্বারাহ ২২৩)। এছাড়া শুক্রবারে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে আলী (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটি ‘মুনকার’ তথা যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬১৯৪)। এছাড়া বিভিন্ন দিনে মিলনের বিভিন্ন ফযীলত সম্পর্কে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে, তা শী‘আদের তৈরী জাল বর্ণনা মাত্র (খোমেনী, তাহরীরুল ওয়াসায়েল, বিবাহ অধ্যায়)। তবে হায়েয-নেফাসের সময় সহবাস নিষিদ্ধ (বাক্বারাহ ২২২; বুখারী হা/২২৮; মিশকাত হা/৫৫৭)।
ইসলামিক শরীয়ত মোতাবেক সহবাসের সঠিক নিয়ম কানুন
এখানে এ বিষয়ে একটু ধারণা দেয়া হলো:
১.যদিও হাদিস থেকে বিভিন্ন আসনে সহবাস করার দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তবে সহবাসের স্বাভাবিক পন্থা হলো এই যে, স্বামী উপরে থাকবে আর স্ত্রী নিচে থাকবে। প্রত্যেক প্রাণীর ক্ষেত্রেও এই স্বাভাবিক পন্থা পরিলক্ষতি হয়। সর্বপরি এ দিকেই অত্যন্ত সুক্ষভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আল কুরআনে বলা হয়েছেঃ
"যখন স্বামী -স্ত্রীকে ঢেকে ফেললো তখন স্ত্রীর ক্ষীণ গর্ভ সঞ্চার হয়ে গেলো।"
আর স্ত্রী যখন নিচে থাকবে এবং স্বামী তার উপর উপুড় হয়ে থাকবে তখনই স্বামীর শরীর দ্বারা স্ত্রীর শরীর ঢাকা পড়বে। তাছাড়া এ পন্থাই সর্বাধিক আরামদায়ক। এতে স্ত্রীরও কষ্ট সহ্য করতে হয়না এবং গর্ভধারণের জন্যেও তা উপকারী ও সহায়ক। বিখ্যাত চিকিতসা বিজ্ঞানী বু-আলী ইবনে সীনা তার অমর গ্রন্থ "কানুন" নামক বইয়ে এই পন্থাকেই সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে উলেখ করেছেন এবং 'স্বামী নিচে আর স্ত্রী উপরে' থাকার পন্থাকে নিকৃষ্ট পন্থা বলেছেন। কেননা এতে পুংলিংগে বীর্য আটকে থেকে দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আনন্দঘন মুহুর্তটা পরবর্তিতে বেদনার কারণ হয়ে না দাড়ায়। তাই ইসলামী জীবন বিধান মেনে চলুন আনন্দকে অনন্দ হিসেবে উপভোগ করুন।
২.হযরত আলী (রাযি.) এর অসিয়ত :-
হযরত আলী (রাযি.) তাঁর অসিয়ত নামায় লিখেছেন যে, সহবাসের ইচ্ছে হলে এই নিয়তে সহবাস করতে হবে যে, আমি ব্যভিচার থেকে দূরে থাকবো। আমার মন এদিক ওদিক ছুটে বেড়াবেনা আর জন্ম নেবে নেককার ও সত সন্তান। এই নিয়তে সহবাস করলে তাতে সওয়াব তো হবেই সাথে সাথে উদ্যেশ্যও পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ।
৩. স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পাক পবিত্র থাকবে। মুস্তাহাব হলো "বিসমিল্লাহ" বলে সহবাস শুরু করা। ভুলে গেলে যখন বীর্যপাতের পূর্বে মনে মনে পড়ে নেবে।
৪. সহবাসের পূর্বে সুগন্ধী ব্যবহার করা সুন্নত। সকল জাতিয় দুর্গন্ধ জাতীয় জিনিস পরিহার করা উচিত। উল্লেখ্য যে, ধুমপান কিংবা অপরিচ্ছন্ন থাকার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। আর এতে কামভাব কমে যায়। আগ্রহের স্থান দখল করে নেয় বিতৃষ্ণা।
৫. কেবলামূখী হয়ে সহবাস করা যাবে না।
৬. একেবারে উলঙ্গ হওয়া যাবে না।
৭. বীর্যপাতের পর ততক্ষণাত বিচ্ছিন্ন হবে না, বরং স্ত্রীর বীর্যপাত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।
৮. বীর্যপাতের সময় মনে মনে নির্ধরিত দোয়া পড়বে। কেননা যদি সে সহবাসে সন্তান জন্ম নেয় তাহলে সে শয়তানের প্রভাব মুক্ত হবে নিয়ত ঠিক করুন।
৯. ফলবান গাছের নিচে স্ত্রী সহবাস করবে না।
১০. সহবাসের প্রথমে দোয়া পড়বেন।
স্ত্রী সহবাসের দোয়া :-
بِسْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
(বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্শাইত্বানা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বানা মা রযাকতানা)।.
'আল্লাহ্র নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন।" (সুত্র :- বুখারী ৬/১৪১, নং ১৪১; মুসলিম ২/১০২৮, নং ১৪৩৪)
তারপর স্ত্রীকে আলিঙ্গন করবেন। স্ত্রী যদি ইচ্ছা হয় তখন তাকে ভালোবাসা দিবে এবং আদর সোহাগ দিবে। চুম্বন দিবে। তখন উভয়ের মনের পূর্ণ আশা হবে সহবাস। তখন বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবেন।
১১. স্ত্রী সহবাস করার সময় নিজের স্ত্রীর রূপ দর্শন শরীর স্পর্শন ও সহবাসের সুফলের প্রতি মনো নিবেশ করা ছাড়া অন্য কোনো সুন্দরী স্ত্রী লোকের বা অন্য সুন্দরী বালিকার রুপের কল্পনা করিবে না।
১২. স্ত্রীর হায়েজ-নেফাসের সময় উভয়ের অসুখের সময় সহবাস করবেন না।
১৩. চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
১৪. স্ত্রীর জরায়ু দিকে চেয়ে সহবাস করবেন না। ইহাতে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়ে যায়।
১৫. সহবাসের সময় স্ত্রীর সহিত বেশি কথা বলবেন না।
১৬. নাপাক শরীরে স্ত্রী সহবাস কবেন না।
১৭. উলঙ্গ হয়ে কাপড় ছাড়া অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করবেন না।
১৮. জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
১৯. ভরা পেটে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
২০. উল্টাভাবে স্ত্রী সহবাস না করাই ভালো। তবে করলে এতে কোনো পাপ নেই।
২১. স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
২২. পূর্ব-পশ্চিম দিকে শুয়ে স্ত্রী সহবাস করবেন না।
যৌন নিয়ম কানুন - কুরআন ও হাদীসের আলোকে
কুরআন ও হাদীসের আলোকেরুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে শরীরে কোন কাপড় না রেখে কি ঘুমানো যায়। লজ্জাস্থান অপ্রয়োজনে খুলে রাখা বৈধ নয়।পর্দারভেতরে প্রয়োজনে তা খুলে রাখায় দোষ নেই। যেমন মিলনের সময়, গোসলের
সময় বা প্রস্রাব পায়খানার করার সময়। অপ্রয়োজনের সময় লজ্জাস্থান আবৃত
রাখা ওয়াজেব। নাবি (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।” সাহাবী বললেন, 'হে আল্লহর রাসুল! কেউ
যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে,
তাকে লজ্জা করা হবে।” ৬১৪ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত
৩১১৭ নং)
এখানে “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর”---এর মানে এই নয় যে, স্ত্রী ও ক্রীতদাসীর কাছে সর্বদা নগ্ন থাকা যাবে। উদ্দেশ্য হল, তাদের মিলনের সময় অথবা অন্য প্রয়োজনে লজ্জাস্থান
খোলা যাবে, অপ্রয়োজনে নয়। তাছাড়া উলঙ্গ অবস্থায় ঘুমালে আকস্মিক বিপদের সময় বড় সমস্যায় পড়তে হবে। সুতরাং সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়। স্বামী স্ত্রী একে অপরের গোপন অঙ্গ দেখতে পারবে কি? শরীয়তে তাতে কোন বাধা নেই।
স্বামী স্ত্রী উভয়েই উভয়ের সর্বাঙ্গ নগ্নবস্থায় দেখতে পারে। (ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৭৬৬)
এতে স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতিও নেই ‘স্বামী স্ত্রীর একে অন্যের লজ্জাস্থান দেখতে নেই, বা হযরত আয়েশা (রঃ) কখনও স্বামীর গুপ্তাঙ্গ দেখেননি, উলঙ্গ হয়ে গাধার মত সহবাস করো না, বা উলঙ্গ হয়ে সহবাস করলে সন্তান অন্ধ হবে। সঙ্গমের সময়
কথা বললে সন্তান তোৎলা বা বোবা হয়' ইত্যাদি বলে যে সব হাদীস বর্ণনা করা হয়, তার একটিও সহীহ ও শুদ্ধ নয়। (দেখুন, তুহফাতুল আরুশ ১১৮
– ১১৯ পৃঃ)
শুনেছি, সহবাসের সময় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হতে নেই, রুম অন্ধকার রাখতে হয়, একে অপরের লজ্জাস্থান দেখতে নেই ইত্যাদি। তা কি ঠিক? এ হল লজ্জাশীলতার পরিচয়। পরন্ত শরীয়তে তা হারাম নয়। অর্থাৎ রুম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে এবং সেখানে স্বামী স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না থাকলে আর পর্দার প্রয়োজন নেই। স্বামী স্ত্রী একে অন্যের লেবাস। উভয়ে উভয়ের সব কিছু দেখতে পারে। মহান আল্লাহবলেছেন। “(সফল মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।
সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালংঘনকারী।
(মু’মিনূনঃ ৫-৬, মাআরিজঃ ২৯-৩১)”
নবী (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ও ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকটে লজ্জাস্থানের হেফাযত কর।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।” সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেউ
যদি নির্জনে থাকে।’ তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লহ এর বেশী হকদার যে,
তাকে লজ্জা করা হবে।” ৬১৭ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩১১৭ নং) সুতরাং রুম অন্ধকার না করলে এবং উভয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ
হলে কোন দোষ নেই। (ইবনে উষাইমীন)
কোন কোন সময় স্ত্রী সহবাস নিসিদ্ধ? শুনেছি অমবশ্যা ও পূর্ণিমার রাত্রিতে সহবাস করতে হয় না। এ কথা কি ঠিক? দিবারাত্রে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ। তবে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কয়েকটি নিষিদ্ধ সময় আছে,
যাতে স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ নয়। ১। স্ত্রীর মাসিক অথবা প্রসবোত্তর খুন থাকা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকে রাজঃস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, তা অশুচি। সুতরাং তোমরা রাজঃস্রাবকালে স্ত্রীসঙ্গ বর্জন কর এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন
তারা পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ
তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণ কে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।” (বাকারাহঃ ২২২)
আল্লাহ্র রাসুল (সঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি তার ঋতুমতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর পায়ুহ্যদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন
গনকের নিকট উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকে সে অবিশ্বাস ও অমান্য করে। কারণ, কুরআনে এ সব
কুকর্মকে নিসিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।) (আহমাদ ২/৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
২। রমযানের দিনের বেলায় রোযা অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেছেন, “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক
এবং তোমরা তাদের পোশাক।” (বাকারাহঃ ১৮৭) আর বিদিত যে, রমযানের রোযা অবস্থায় সঙ্গম করলে যথারীতি তার কাফফারা আছে। একটানা দুইমাস রোযা রাখতে হবে, নচেৎ অক্ষম হলে ষাট জন মিসকীন খাওয়াতে হবে।
৩। হজ্জ বা উমরার ইহরাম অবস্থায়। মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ
না করে।” (বাকারাহঃ ১৯৭)
এ ছাড়া অন্য সময়ে দিবারাত্রির যে কোন অংশে সহবাস বৈধ। (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-মুনাজ্জিদ)
হাদিসে এসেছে, “যদি তোমরা কেউ স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা করে, তখন দুআ
পড়ে, তাহলে তাঁদের ভাগ্যে সন্তান এলে, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।” (বুখারী-
মুসলিম) বাহ্যতঃ এ নির্দেশ স্বামীকে দেয়া হয়েছে। প্রশ্ন হল, স্ত্রীর জন্যও কি দুআ পড়া বিধেয়? আসলে সহবাসের দুআ স্বামীর জন্যই
বিধেয়। স্ত্রী পড়লেও দোষ নেই। যেহেতু এক কাজ উভয়ের, সে কাজের নির্দেশ পুরুষকে দেওয়া হলেও মহিলাও শামিল হয়। (লাজনাহ
দায়েমাহ) সহবাসের আগে দুআ পড়লে শয়তান ক্ষতি করতে পারে না। ক্ষতি করতে না পারার অর্থ কি? এর অর্থ এই যে,-
(ক) ‘বিসমিল্লাহ’র বরকতে সেই সন্তান নেক হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ শয়তান কে বলেছেন, “আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য
থাকবে না।” (হিজরঃ ৪২)
(খ) সন্তানের স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি হয় না।
(গ) সন্তান শিরক ও কুফুরমুক্ত হয়।
(ঘ) কাবীরা গোনাহ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়।
(ঙ) ঐ সহবাসে শয়তান শরীক হতে পারেনা। আমি বিবাহিত। আমার সন্তান হয় না। টিউবের মাধ্যমে সন্তান নেব ইচ্ছা করেছি। আমি চাই আমার সন্তানকে যেন শয়তান ক্ষতিগ্রস্ত না করে। কিন্তু তার জন্য পাঠিতব্য দুআটি কখন পড়ব? যখন টিউবে রাখার জন্য বীর্য দেবেন, বীর্যপাতের আগে প্রস্তুতির সময় দুআটি পড়ে নেবেন। স্ত্রী গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ও
কি সহবাসের সময় দু’আ পড়তে হবে?
সহবাসের সময় দু’আ পড়ায় দুটি লাভ আছে। শয়তানের শরীক হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা এবং তার ক্ষতি থেকে ঐ মিলনে সৃষ্ট সন্তানকে রক্ষা করা। সুতরাং যখন আমরা জানি যে, সন্তান আগের মিলনে এসে গেছে, অথবা সন্তানহবে না, অথবা সন্তান চাই না, তখনও যদি আমরা দু'আ পড়ি, তাহলে তাতে আমরা নিজেদেরকে আমাদের যৌনআনন্দে শয়তানের শরীক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারব। বলা বাহুল্য, সহবাসের দু'আ সর্বাবস্থায় পঠনীয়। যেহেতু
হাদিসের নির্দেশ ব্যাপক। (ইবনে বায)
সহবাসের সময় হাঁচি হলে নির্দিষ্ট যিকির পড়া যাবে কি?
এই সময় মুখে যিকির পড়া যাবে না। মনে মনে পড়লে দোষ নেই। পেশাব
পায়খানা করা অবস্থায় নবী (সঃ) সালামের জবাব দেননি। (মুসলিম ৩৭০
নং)
শরীয়তে সমমৈথুন প্রসঙ্গে বিধান কি?
সমমৈথুনঃ পুরুষ সঙ্গম বা পুরুষ-পুরুষে পায়ুপথে কুকর্ম করাকে বলে। আর এরই অনুরূপ স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করাও। এটা সেই কুকর্ম, যা লুত (আঃ) এর সম্প্রদায়
করেছিল। যেমন মহান আলাহ বলেন,“ মানুষের মধ্যে তোমরা তো কেবল
পুরুষদের সাথেই উপগত হও।" (সূরা শূআরা ১৬৫ আয়াত) তিনি আরও
বলেন, “তোমরা তো কাম তৃপ্তির জন্য নারী ত্যাগ করে পুরুষদের নিকট গমন কর!” (সূরা আ’রাফ ৮১ আয়াত)
আল্লাহ তাঁদেরকে এই কুকাজের শাস্তি স্বরূপ তাঁদের ঘর বাড়ী উল্টে দিয়েছিলেন
এবং আকাশ থেকে তাঁদের উপর বর্ষণ করেছিলেন পাথর। তিনি বলেন,
“(অতঃপর যখন আমার আদেশ এলো) তখন আমি (তাঁদের নগরগুলোকে)
ঊর্ধ্বভাগকে নিম্নভাগে পরিণত করেছিলাম এবং আমি তাঁদের উপর ক্রমগত কঙ্কর বর্ষণ করেছিলাম।” (সূরা হিজর ৭৪ আয়াত)
হস্ত মৈথুন যুবক যুবতী কারোর জন্যও বৈধ নয়। কিন্তুযদি স্বামী স্ত্রী একে অপরের
হস্ত দ্বারা মৈথুন করে, তাহলেও কি তা অবৈধ হবে?
স্বামী স্ত্রীর ক্ষেত্রে এমন মৈথুন অবৈধ নয়। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেছেন, “(সফল মু’মিন তারা,) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের
পত্নি অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতীত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।
সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালঙ্ঘকারী।” (মু’মিনূনঃ ৫-৭, মাআরিজঃ ২৯-৩১)
সুতরাং অবৈধ হল নিজের হাতে নিজের বীর্যপাত। স্বামী স্ত্রীর একে অন্যের হাত
দ্বারা বীর্যপাত অবৈধ নয়। আর মহানবী (সঃ) ঋতুমতী স্ত্রীর
সাথে যৌনাচার করার ব্যাারে বলেছেন, “সঙ্গম ছাড়া সব কিছু কর।” (মুসলিম ৩০২ নং)
সুতরাং উক্ত সম্প্রদায়ের মতো কুকর্মে যে লিপ্ত হবে সেও উপর্যুক্ত শাস্তির উপযুক্ত। তাই এমন দুরাচার প্রসঙ্গে কিছু সাহাবা (রাঃ) এর ফতোয়া হল,
তাকে জ্বালিয়ে মারা হবে। কেউ কেউ বলেন, উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা দিয়ে নীচে ফেলে তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলা হবে। ৬২৬
(ইবনে জিবরীন) এ বিষয়ে একাধিক হাদীসেও নবী (সঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে; এক
হাদীসে তিনি বলেছেন, “যাকে লুত সম্প্রদায়ের মত কুকর্মে লিপ্ত পাবে, তাকে এবং যার সাথে এ কাজ করা হচ্ছে, তাঁকেও তোমরা হত্যা করে ফেল।” (তিরমিজী,
ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩৫৭৫ নং)।
Post a Comment
If you learn something from our post please comment...
EmoticonClick to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.