বয়লার আসলে কি?
বয়লার আসলে একটি পানির চৌবাচ্চা !
হ্যা বিষয়টি এমনি প্রায়। বয়লার মূলত পানি গরম করে বাস্প তৈরি করে। সেই বাস্প দিয়ে জাহাজ/রেলের ইঞ্জিন চলে। গার্মেন্টর্স কারখানায় কাপড় ওয়াস করতে স্টিম ব্যবহার হয়। ইস্তি করতেও ব্যবহার হয় বয়লারের উৎপাদিত বাস্প ।
বয়লার দুই প্রকারের হয়ে থাকে
১. ফায়ার টিউব বয়লার
২. ওয়াটার টিউব বয়লার
কেন বয়লার বিস্ফোরিত হয়।
বয়লার ভেতরে স্টিলের পাইপ থাকে যার মধ্য দিয়ে মূলত আগুন প্রবাহিত হয়। আগুনের তাপে পানি গরম হয়ে বাস্প তৈরি হয়।
প্রতিটি বয়লারের সংগে একাধিক পানির পাম্প থাকে। পাম্পের সাহায্য সফট ওয়াটার মানে একটি বিশেষ মেশিন (সফটনার প্লান্ট) এর সাহায্য নরমাল র ওয়াটারকে সফট ওয়াটার করা হয়। যারফলে পানির ভেতরের অক্সিজেন সরিয়ে ফেলা হয়। পানিকে ফিল্টার করে আয়রন সরিয়ে তবেই তা বয়লারে ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। মোট কথা পানিই হল বয়লারের প্রাণ। সফট পানি তৈরি করতে একটু খরচ হয় বলে অনেকেই সফটনার ঠিক মত চালনা করেন না। যা চরম ঝুকিপূর্ন।
পানি পাম্পের সাহায্য বয়লারের ভেতরে যাবার পরে গ্যাস অথবা তেলের মাধ্যমে আগুন জ্বলে ইগনেশনের মাধ্যমে।
প্রতিটি বয়লারে ২ টি করে মেক্যানিকাল সেফটি ভালব থাকে।
বাস্প ৮০% পূর্ন হবার পরে ইলেক্টিক সেন্সর সিগনাল দিলে আগুন নিভে যায়।
আবার ৩০% বাস্পের সময় তা চালু হয়।
এটা সেটিং করে যেভাবে নিবে সেভাবেই কাজ করবে।
কোন কারনে ইলেক্টিক সেন্সর ফেইল করলে মেকানিক্যাল সেফটি ভালব অটোমেটিক অপেন হয়ে যাবে।অতিরিক্ত স্টিম বা বাস্প তৈরি হলে সেটি বের হবার এরকম তিনটি অপশন থাকার পরেও কেন
বয়লার বিস্ফোরিত হয়?
এর কারন প্রেসার বেশি হওয়ার পরেও সেফটি ভালব ওপেন না হলে এধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বছরের পর বছর ধরে সেফটি ভালব লাগানো থাকলে সেটি কার্যক্ষম আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়না। অনেক সময় ময়লা জমে ভালবটি বন্ধ হয়ে গেলেও বয়লার বিস্ফোরিত হতে পারে।
"অনেক সময় দেখা গেছে বয়লারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেসব ইলেকট্রিক সেফটি গার্ড চালু হবার কথা তা চালু হয়না। সময় মত মেইন্টানেন্স না করার কারনেই এমনটা ঘটে। অসচেতন অদক্ষ টেকনিশিয়ান বা ইঞ্জিনিয়ারদের কারনেই বয়লার বিস্ফোরন ঘটে।
এখন জেনে নিন একজন দক্ষ বয়লার চালকের কি কি বিষয় জানা থাকা দরকার।
বয়লার ভালো রাখতে করনীয়...
১। গ্যাসের চাপ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন ঠিকমত কাজ করছে কি না চেক করা।
২। বয়লার চালু করার পূর্বে Fed Tank এর পানি Soft আছে কি না তা পরীক্ষা করা। কোন অবস্থাতেই হার্ডনেস যুক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না।
৩। বয়লারের বাতাস আছে কি না থাকলে ব্লোয়ার দিয়ে বের করে নিতে হবে। Ear Cap / Header এর Cap খুলে ।
৪। পর্যাপ্ত পরিমান ষ্ট্রিম হলে খরহব Line On করতে হবে।
৫। পানি এবং গ্যাস যথাযথ আছে কি না প্রতিনিয়ত চেক করতে হবে।
৬। বয়লারের ষ্ট্রিম যথাযথ পরিমাণ আছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে।
৭। Fire Flame যথাযথ আছে কি না তা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৮। প্রতি আট ঘন্টা পরপর পানির হার্ডনেস (০-৫) পি.এইচ (৭-১১) এবং Fed Tank এর Temp (৬০-৭০) ডিগ্রী রাখতে হবে।
৯। অস্বাভাবিক শব্দ যদি পরিলক্ষিত হয় তাহলে তার উৎস খুঁজে বের করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১০। বয়লারের সকল সেফটি ভাল্ব প্রতি মাসে একবার পরীক্ষা করতে হবে।
১১। ওয়াটার লেভেল কন্ট্রোলার ৩০ দিনে পরীক্ষা প্রয়োজনে খুলে পরিষ্কার করা।
১২। সেকোয়েন্স কন্ট্রোলার পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুসারে সার্ভিসিং করা।
১৩। সেফটি সার্কিট পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিসিং করা।
১৪। গ্যাস সলেনয়েড ভাল্ব পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিসিং করা।
১৫। বয়লারের অভ্যন্তরে স্কেলের পরিমাণ পরীক্ষা করা এবং স্কেল পরিলক্ষিত হলে জরুরী ভিত্তিতে তা পরিষ্কার করা ।
১৬। বয়লারের পানি সফট আছে কিনা তা পরীক্ষা করা এবং ১৫ পি.এস. আই থাকা অবস্থায় ফ্লো ডাউন করা।
১৭। প্রতি ৬ মাস অন্তর Fire Tube Fire champers, Compressor পরিষ্কার করতে হবে।
বয়লারের উপর প্রশিক্ষন নিতে বছর কয়েক আগে বিটাকের একটি সাত দিনের প্রগ্রামে অংশ গ্রহন করে ছিলাম। সেখানে একটি বড় কোমল পানীয় কোম্পানীর ইঞ্জিনিয়ার বলতে ছিল গত ২ বছরে সে তাদের কোম্পানীর বয়লার টি শুধু অন অফ করেছেন। সেটি খুলে কোন রকম সার্ভিসিং করেনি।
বিস্মিত আমি তাকে বললাম ভাই আপনী জব টা ছেড়ে দিন।
কেন? প্রশ্ন করল উনি।
যেকোন সময় আপনাদের বয়লার টি বিস্ফোরণ হতে পারে। আমি ঠাণ্ডা স্বরে বললাম।
আমাদের দেশে যত বয়লার বিস্ফোরিত হয় তার ৯৫% হয় চালকের গাফলতির কারনে।
শুনতে খারাপ শোনালেও এটা বলতে হয় যে আমাদের দেশের কারখানার মালিকগণ ইঞ্জিনিয়ারদের মোটেও গুরুত্ব দেন না। তারা ভাবেন ১০ হাজার টাকার ইলেকট্রিশিয়ান দিয়েই কারখানা চলবে।
আমি আমার গত ১৫ বছরের প্রকৌশলী জীবনে দেখেছি এরকম বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে অল্প শিক্ষিত একজন ইলেকট্রিশিয়ান বা লাইসেন্সহীন টেকশিয়ান দিয়ে বয়লার চালানো হয়।
যা চরম ঝুকিপূর্ন।
বয়লার দেখাশোনার দ্বায়িত্বে সরকারের একটি অধিদপ্তর রয়েছে যারা বয়লারের রেজিষ্টেশন করেন। তাদের প্রতি বছরে একবার বয়লার পরিদর্শন করে তারপরে লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়ানোর কথা থাকলেও তারা টাকার বিনিময়ে না এসেই লাইসেন্স নবায়ন করে থাকেন।
লেখক M M Obaydur Waliar Rahman