0
ছোট গল্পঃ  অশ্রু সিক্ত নয়নে


স্বামী, স্ত্রী পাশাপাশি শুয়ে আছে । কারো
মুখে কোন কথা নেই । বাতিটাও নেভানো হয়নি ।
মনে হচ্ছে দুইজন দুই জগতের বাসিন্দা । একজন
ঘুরতে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে আরেক জন
খাবারের অপেক্ষায় ওত পেতে থাকা একটি
টিকটিকের দিকে তাকিয়ে আছে ।
.
বিজয় বিথির দিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন করে
.
-- সত্যি কি সকালে তুমি চলে যাবে ?
-- যা বলার আমি বলেছি । এক কথা বারবার বলতে পারব
না ।
-- আমি তোমাকে আরেকবার অনুরোধ করছি
ভেবে দেখার জন্য ।
-- এখানে ভাবা ভাবির কিছু নেই । তোমার সাথে আমার
সংসার করা হবে না, this is final .

.
বিজয় আর কোন কথা বলে না । আসলে বিথি কি চায়
বিজয় নিজেই জানেনা । ভালোবাসার টানে রাজ
প্রাসাদ
ছেড়ে তার কাছে আসলেও সেই ভালোবাসাটায়
এখন চিড় ধরেছে । বিজয়, বিথি কে পর্যাপ্ত পরিমাণ
সময় দিতে পারে না । অফিস শেষে আরো দুটো
টিউশনি করতে হয়, কারন ঢাকা শহরে ফ্ল্যাট বাসা
ভাড়া
নিয়ে থাকা যে কি পরিমাণ খরচ সেটা শুধু বিজয় জানে
। অফিসের বেতন দিয়ে সংসার চলে না । মেয়ে,
মৌকে ভালো স্কুলে পড়াতে হয় এছাড়া বিথির
অতিরিক্ত খরচ তো আছেই ।
.
প্রতিদিনই কোন না কোন বিষয় নিয়ে তাদের
মাঝে ঝগড়া লেগেই থাকে । আজ এটা নেই তো
কাল ওটা নেই । শাড়ি নেই, গহনা নেই, স্নু নেই,
পাউডার নেই, শুধু নেই আর নেই । এতো পরিশ্রম
করে আসার পর এতো কথা ভালো লাগে না
বিজয়ের । তবে আজ ঝগড়াটা অতিরিক্ত মাত্রায় হয়ে
গেছে । বিজয় অনিচ্ছা কৃত বিথি কে খারাপ কথা বলে
ফেলেছে । রাত করেই বিথি চলে যেতে
চেয়েছিল কিন্তু বিজয় যেতে দেয়নি । কিন্তু ব্যাগ
গুছিয়ে রেখেছে সকাল হলেই নাকি চলে যাবে ।
.
বিজয় আবার বিথিকে প্রশ্ন করে
.
-- তুমি কি মৌকে সাথে করে নিয়ে যাবে ।
-- হ্যা ওকে নিয়ে যাব তবে মৌ তোমার কাছে
থাকতে চাইলে রেখে দিতে পার ।
-- মৌ কি আমার কাছে থাকবে ?
-- সেটা আমি বলবো কিভাবে, মৌকে জিজ্ঞেস কর
গিয়ে ।
...
বিথি মনে মনে বলতে থাকে, এমন সেধে
সেধে কথা বলছে । অনেক হয়েছে আর না ।
আর কোন অপমান সে সহ্য করবে না । সে
বিজয়ের কাছে কি চেয়েছিল, সামান্য একটু
ভালোবাসাই তো । এখন অবহেলা করতে শুরু
করেছে । সপ্তাহের সাত দিনের ভেতর স্ত্রীর
জন্য সামান্য সময় হয় না । রাত করে বাসায় ফেরে,
কোন কিছু না জিজ্ঞেস করেই ঘুমিয়ে পরে ।
প্রয়োজনীয় কোন কিছুই কথা বললেই তেলে
বেগুণে জ্বলে উঠে । আজ কি অকথ্য ভাষায়ই না
কতো গুলো কথা তাকে শুনিয়ে দিল । সব সহ্য করা
যায় কিন্তু চরিত্র নিয়ে কথা বললে সেটা সহ্য করার
মতো না । সেপারেশন ছাড়া এই নরক থেকে সে
মুক্তি পাবে না । ব্যাগ গুছানোই আছে সকাল হলেই
সে চলে যাবে ।
....
বিথির সারা রাতে ঘুম আসেনি । শেষ রাতের দিকে
চোখটা সামান্য লেগে এসেছিল । ঘুম ভেঙেছে
সকাল সাতটায়, তখনও বিজয় ঘুমিয়ে আছে । খাট
থেকে নামতেই, খাটের পাশে রাখা টি টেবিলের
উপর চোখ পড়লো বিথির । একটা চিরকুট ভাঁজ করা ।
কই ঘুমোনোর আগে তো এটা দেখেনি ।
আনমনে চিরকুটটা হাতে নেয় বিথি । পড়তে শুরু
করে ,,,,,,
.
প্রিয় আম্মু,
আমি জানি তুমি আজ সাকালে আমাকে নিয়ে নানুর
বাড়ি
চলে যাবে । আচ্ছা আম্মু তুমি কি বলতে পার আমি
আব্বু কে ছাড়া কিভাবে থাকব ? আব্বু তো আমাকে
কত্তো ভালোবাসে, কত্তো আদর করে । আমি
নানুর বাসায় চলে গেলে কে আমাকে আদর
করবে ? কে আমাকে আইসক্রিম কিনে দেবে ?
শোন আম্মু তুমি যখন রোজ রাতে আব্বুর সাথে
ঝগড়া কর আমি তখন ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদি । কেন কাঁদি
জান ? আমি বুঝতে পারি তুমি মনে হয় আব্বু কে
ভালোবাস না । প্লীজ আম্মু তুমি আব্বু ছেড়ে
চলে যেও না । তুমি চলে গেলে আব্বু কে রান্না
করে খাওয়াবে । আব্বুর বুঝি কষ্ট হবে না ।
না, না আম্মু আমি আব্বুর কাছেও থাকব না । আমি যে
তোমাকেও আরো বেশি ভালোবাসি । তুমি যদি না
থাক, কে আমাকে খাইয়ে দিবে ? কে আমাকে
স্কুলে দিয়ে আসবে । কে আমার মাথায় চুল গুলো
আঁচড়িয়ে দিবে । আমার না কিচ্ছু ভালো লাগে না ।
আমি যে তোমাদের দুজন কে অনেক ভালোবাসি
আম্মু । তুমি যদি সত্যি সত্যি আব্বু কে ছেড়ে চলে
যাও আমি সত্যি বলছি আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে মরে
যাব, তখন আর তোমরা আমাকে খুঁজেই পাবে না
.
মেয়ের হাতে চিরকুটটা পড়ে বিথির চোখ দিয়ে
বর্ষা নেমেছে । সেই বর্ষায় এক সময় গর্জন হয়
। কান্নায় শব্দ বেড়িয়ে আসে নিজের অজান্তেই
। কান্নার শব্দে বিজয়ের ঘুম ভেঙ্গে গেছে ।
অনেকটা আশ্চর্য হয়ে ঘুম চোখে তাকিয়ে
আছে বিথির দিকে । বিথির হাতে একটা কাগজ কিন্তু
কাগজটা কিসের বিজয় জানেনা । কেন সে কান্না
করছে জিজ্ঞেস করতেই বিথি কাগজটি এগিয়ে
দেয় তার দিকে । হাতের লেখা দেখেই বুঝতে
পারে এটা মৌয়ের লেখা ।
চিরকুটটা পড়া শেষ হতেই সেও অঝর ধারায় কাঁদতে
থাকে । এই একটি মাত্র মায়ার বন্ধন কে কাঁদিয়ে তারা
কিছুতেই আলাদা হতে পারে না ।
.
ভেজা চোখেই বিজয় বিথির দিকে তাকায়, বিথিও
তাকায় বিজয়ের দিকে । দু জোড়া ভেজা চোখ
বলে দেয় অনেক কথা । অশ্রু সিক্ত নয়নে একে
অপর কে জড়িয়ে ধরে । তাদের পরবর্তীতে কি
করতে হবে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।

Post a Comment

If you learn something from our post please comment...

 
Top