আপনি কি জানেন বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে স্টিফেন হকিং বলেছিলেন, 'সে সেরা। আমি তার কাছে কিছুই না।'?
"সায়েন্স ওয়ার্ল্ড" নামে একটি বিজ্ঞান ম্যাগাজিন ২০০৭ সালে জামাল নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটি ফিচার ছাপিয়েছিল। বাংলাদেশের কোনো ম্যাগাজিনে উনাকে নিয়ে লেখা এটিই ছিলো প্রথম ও শেষ ফিচার।
"কৃষ্ণবিবর" নামে উনার একটি বই আছে। অনেক খুঁজেও কোথাও সেই বইটি পেলাম না । শুধু এটাই নয়, "কৃষ্ণবিবর" "দ্য আল্টিমেট ফেইট অব ইউভার্স" "রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি" বইগুলো অক্সফোর্ড কেমব্রিজ আর হার্ভার্ড এর মত বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও ১০০ টারও বেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো পড়ানো হয়। কিন্তু যে দেশে তিনি জন্মেছিলেন, সেই বাংলাদেশের কোন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই থেকে কোন লেকচার দেয়া হয় বলে আমার জানা নেই...
২০০১ সালে যখন পৃথিবী ধ্বংস হবার একটা গুজব উঠেছিল তখন জামাল নজরুল ইসলাম অংক কষে বলেছিলেন পৃথিবী তার কক্ষপথ থেকে ছুটে চলে যাবার কোনো সম্ভাবনা নেই।
স্টিফেন হকিং কে চিনে না এমন মানুষ খুব কম আছে। উনার লেখা "আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম" বইটি এক কোটি কপিরও বেশী বিক্রি হয়েছে সারাবিশ্বে । সে বইটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। কিন্তু এই বইটি প্রকাশের প্রায় ৫ বছর আগেই ১৯৮৩ সালে জামাল নজরুল ইসলাম "দ্যা আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স" বইটি লিখেছিলেন। দুটো বই-ই প্রায় একই সব টপিকের উপর লিখা। ব্লাকহোল, ওয়ার্ম হোল, সুপারনোভা, কসমিক রেডিয়েশন, প্যারালাল ইউনিভার্স, বাটারফ্লাই ইফেক্ট ইত্যাদি সব জোতিপদার্থর্বিজ্ঞানীয় ব্যাপারগুলোই ঘুরেফিরে দুটো বইতেই উঠে এসেছে। কিন্তু তুলনামূলক বিচারে জামাল নজরুল ইসলামের বইটিকেই বিশ্বখ্যাত বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকগন অধিক মূল্যায়ন করেছেন, যেটি প্রকাশিত হয়েছিল হকিং এর বইয়েরও প্রায় ৫ বছর পূর্বে।
অথচ হকিং এর বই নিয়ে যতটা না মাতামাতি সারাবিশ্বে হয়েছে, তার ছিঁটেফোঁটাও হয়নি জামাল নজরুল ইসলামের কোন বই নিয়ে.. কেনো? পরে বলছি।
বলা হয়ে থাকে, বিশ্বের ৭ জন শ্রেষ্ট বিজ্ঞানীর নাম বলতে গেলে সে তালিকায় নাকি জামাল নজরুলের নামও চলে আসবে।
(Ashik ভাইয়ের পোস্ট থেকে তথ্য সংগৃহীত ও পরিমার্জিত করা হয়েছে)
বিশ্বের বুকে বাংলার গর্ব জামাল নজরুল ইসলাম
.
১৯৮১ সালে লন্ডনের লাখ টাকা বেতনের চাকরি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে মাত্র ৩ হাজার (২৮ শত) টাকা বেতনের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। তাই সব সুযোগ সুবিধা ছেড়ে দেশে চলে এসেছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বন্ধুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে জামাল স্যারকে নিয়ে কথা উঠে। ওর থেকেই জানতে পারলাম উনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করতেন না। কারণ কি ছিলো জানেন?অন্য দেশের সিম কোম্পানি আমার দেশের টাকা নিয়ে যাবে একজন দেশপ্রেমিক হয়ে উনি এটা করতে পারেন না।
.
১৯৮১ সালে লন্ডনের লাখ টাকা বেতনের চাকরি এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা ছেড়ে মাত্র ৩ হাজার (২৮ শত) টাকা বেতনের চাকরি নিয়ে তিনি চলে আসেন মাতৃভূমি বাংলাদেশে। বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা এবং বিজ্ঞান গবেষণার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন তিনি। তাই সব সুযোগ সুবিধা ছেড়ে দেশে চলে এসেছিলেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। বন্ধুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে জামাল স্যারকে নিয়ে কথা উঠে। ওর থেকেই জানতে পারলাম উনি কোনো মোবাইল ব্যবহার করতেন না। কারণ কি ছিলো জানেন?অন্য দেশের সিম কোম্পানি আমার দেশের টাকা নিয়ে যাবে একজন দেশপ্রেমিক হয়ে উনি এটা করতে পারেন না।
১৯৩৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে উনার জন্ম। জন্মস্থান ঝিনাইদহ হলেও তার শিকড়ের ঠিকানা চট্টগ্রামে। চাকরিসূত্রে বাবা ঝিনাইদহ থাকতেন।।সেখানেই জন্ম। বংশগত দিক থেকে ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান। তৎকালে ঢাকার নবাব বাড়ির পাশাপাশি যোগাযোগ ছিল জর্ডানের বাদশার পরিবারের সাথে। তাদের কলকাতার বাসায় কবি কাজী নজরুল ইসলামও যাতায়ত করতেন। কবির নামের সাথে মিল রেখেই তার বাবা-মা তার নাম রেখেছিলেন ‘জামাল নজরুল ইসলাম’।
বাবা মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম ছিলেন ঝিনাইদহ জেলার সাব জজ। মা রাহাত আরা বেগম ছিলেন একজন সাহিত্য অনুরাগী লেখক। গান ও গাইতেন বেশ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ' ডাকঘর 'নাটকটি উর্দুতে অনুবাদ করে বেশ প্রশংসা অর্জন করেছিলেন তিনি।
অধ্যাপক ইসলামের জীবনে তার মা ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিশু জামাল নজরুল ইসলামকে মাত্র ১০ বছর বয়সে রেখেই ১৯৪৯ সালে তিনি চলে যান পৃথিবী ছেড়ে।
শৈশবে কলকাতার একটি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন তিনি। সেখান থেকে চলে আসেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির সময় তার মেধা দেখে অভিভূত হন প্রধান শিক্ষক। মেধায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ডাবল প্রমোশন দিয়ে তুলে দেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে। এখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে চলে যান পাকিস্তানের লরেন্স কলেজে। সেখান থেকে 'এ লেভেল, ও লেভেল' সম্পন্ন করে ভর্তি হন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি সম্পন্ন করে চলে যান লন্ডনের বিশ্ববিখ্যাত ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৬৪ সালে 'এপ্লায়েড ম্যাথমেটিক্স এন্ড থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স' এর উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন তিনি।
মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি দুইবার বিএসসি করে ফেলেন( লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজে দ্বিতীয়বার বিএসসি করেছিলেন)। ছোটবেলায় যেমন ডাবল প্রমোশন পেয়ে সিক্সে উঠেছিলেন তেমনি পোস্ট ডক্টরাল করার সময়ও ডাবল প্রমোশন পেয়েছিলেন।
বিজ্ঞানে উঁচু মানের পারদর্শী হলে কিংবা খুব বড় ধরনের অবদান রাখলে ডক্টর অব সায়েন্স( ডিএসসি) প্রদান করা হয়। এ ধরনের ব্যাক্তিরা হলেন শিক্ষকদের শিক্ষক, সেরাদের সেরা। জামাল নজরুল ইসলামও ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিএসসি ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশদ বাংলার এক সাক্ষাতকারে নিজের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন--
"১৯৫৭ সালে আমি কলকাতা থেকে অনার্স শেষ করে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে গণিতশাস্ত্রে ট্রাইপাস করতে যাই। সাধারণত এটা ৩ বছরের কোর্স। তবে আমি দুই বছরেই শেষ করে ফেলি। ওখানে আমার সহপাঠী ছিলেন পরবর্তীতে ভারতের বিখ্যাত গণিতবিদ নারলিকার। আরেকজন ছিলেন ব্রায়ান জোসেফসন যে তার পিএইচডি থিসিসের জন্য মাত্র ৩৩ বছর বয়সে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পায়। আমার এক বছরের সিনিয়র ছিলেন জেমস মার্লি যিনি ১৯৬৬ সালে অর্থনীতিতে নোবেলা পান। ১৯৯৮ সালে রসায়নে নোবেল পান আমার শিক্ষক জন পোপল। আমি এগুলো বলছি সে সময় আমাদের লেখাপড়ার পরিমন্ডল কতটুকু ছিল তা বোঝানোর জন্য। আমার পিএইচডি থিসিস ছিল পার্টিকেল ফিজিক্সের উপর। এর ৩-৪ বছর পর আমি আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ শুরু করি। পরবর্তীকালে এর সাথে যুক্ত হয় কসমোলজি। বলতে পারেন এই তিনটিই হচ্ছে আমার আগ্রহ ও কাজের মূল ক্ষেত্র।
জামাল নজরুল ইসলাম বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন ৬টি। এদের মাঝে ৩টি বই বিশ্ববিখ্যাত। ক্যামব্রিজ ও হার্ভার্ড সহ বেশ কয়েকটি নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বই পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়। তার লেখা বই ‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ ফরাসি, জাপানী, পর্তুগিজ, ইতালিয়ান সহ বেশ কয়েকটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এরপর তার উল্লেখযোগ্য বই হচ্ছে Rotating fields in General relativity এবং An introduction to mathematical Cosmology.
বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার জন্য লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি এক অনন্য নাম। এখানে গবেষণাপত্র প্রকাশ করা মানে আক্ষরিক অর্থে রাজকীয় কাজ সম্পন্ন করা। জামাল নজরুল ইসলাম এই প্রসিডিংসয়ে ধারাবাহিকভাবে ৬ টি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। এখানে গবেষণাপত্র প্রকাশ করতে হলে রয়েল সোসাইটির কোনো ফেলো সদস্যের রিকমেন্ডেশন লাগে। উনার জন্য রিকমেন্ডেশন করেছিলেন উনার রুমমেট, বন্ধু, বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ও ফ্রেড হয়েল। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ও উঁচু মানের গবেষণার জন্য ১৯৮২ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানজনক ডিগ্রি 'ডক্টর অব সায়েন্স' প্রদান করেন।
তিনি বাংলায় উল্লেখযোগ্য বই লিখেছেন 'কৃষনবিবর' 'মাতৃভাষা ও বিজ্ঞান চর্চা' 'অন্যান্য প্রবন্ধ' , 'শিল্প সাহিত্য ও সমাজ'।
‘দ্য আল্টিমেট ফেইট অব দ্য ইউনিভার্স’ই তার প্রথম বই, যা ১৯৮৩ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৮১ সালের দিকে দেশে ফিরে প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এ সময় তার বেতন ছিল আটাশ শ’ টাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কিছুতেই রাজি হয়নি তাকে তিন হাজার টাকা বেতন দিতে। এই বেতনেই তিনি অধ্যাপনা করে যান। এখানে এক বছর অধ্যাপনা করার পর গবেষণার কাজে এবং পারিবারিক প্রয়োজনে আবার লন্ডনে ফিরে যাবার প্রয়োজন দেখা দেয় তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার জন্য বাইরে গেলে কর্তৃপক্ষ ছুটি প্রদান করে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত চাকরি বলবৎ থাকে। এর জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে ছুটির আবেদন করেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিচ্ছিল না। উপায় না দেখে চাকরি ছেড়ে চলে যান তিনি। দুই বছরে সেখানে তার গবেষণা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮৪ সালে তিনি সেখানকার বাড়ি-ঘর বিক্রি করে স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন। এরপর অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বেতন বাড়িয়ে তিন হাজার টাকায় উন্নীত করে আর মাঝখানের সময়টিকে শিক্ষা ছুটি হিসেবে গ্রহণ করে।
দেশের মাটিতে তার ভোগান্তি এত অল্প ছিল না অবশ্যই। পরিস্থিতি কেমন নেতিবাচক ছিল সে সম্পর্কে একটু ধারণা পাওয়া যাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ এম হারুন অর রশিদের একটি লেখায়। অধ্যাপক ইসলামের মৃত্যুর পর তাকে স্মরণ করে কালি ও কলম নামের এক সাহিত্য ম্যাগাজিনে তিনি লিখেছেন-
জামালের সঙ্গে আমার সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠতা হয় ১৯৮৪ সালে, যখন তিনি কেমব্রিজ থেকে চট্টগ্রামে চলে আসার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। একদিন তিনি টেলিফোনে আমাকে লন্ডন থেকে জানালেন যে, তিনি বাংলাদেশে চলে আসতে চান। আমি বলেছিলাম, ‘এটা নিশ্চয়ই খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তবে তিনি যদি তাঁর দরখাস্তটি অবিলম্বে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন, তাহলে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে আলাপ করে যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারি।’
তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা আমি শুনতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি বললেন, তিনি ঢাকায় যাবেন না, তিনি চট্টগ্রামে যাবেন। কেননা সেখানে রয়েছে তাঁর পৈতৃক ভবন। আমি তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, মনে হয় না, চট্টগ্রামে তিনি খুব ভালো ছাত্র পাবেন এবং হয়তো সেখানে তাঁর গবেষণাকর্ম ব্যাহতই হবে। কিন্তু তিনি সে-কথা মোটেই কানে তুললেন না। তাঁর কথা ছিল একটাই যে, আমি যেন তাঁর দরখাস্তটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করি। আমি তাই করেছিলাম। এক সকালে ট্রেনে চট্টগ্রামের টিকিট কিনে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বলেছিলাম, ‘জামাল নজরুল ইসলাম এদেশের সম্পদ – তাঁকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা আপনাদেরই সৌভাগ্য।’ উপাচার্য করিম সাহেব আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, জামাল নজরুল ইসলামের জন্য একটি অধ্যাপক পদ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অবিলম্বে সৃষ্টি করে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।
দুঃখের বিষয়, ঢাকায় ফিরে এসে কয়েকদিন পরে খবর পেলাম যে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। তাই কিছুদিন পরে গণিত বিভাগেই একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাও দ্বিতীয়বার আমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করার পর। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
তারপর তিনি যা বলেছিলেন তা আমি শুনতে মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না। তিনি বললেন, তিনি ঢাকায় যাবেন না, তিনি চট্টগ্রামে যাবেন। কেননা সেখানে রয়েছে তাঁর পৈতৃক ভবন। আমি তাঁকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম যে, মনে হয় না, চট্টগ্রামে তিনি খুব ভালো ছাত্র পাবেন এবং হয়তো সেখানে তাঁর গবেষণাকর্ম ব্যাহতই হবে। কিন্তু তিনি সে-কথা মোটেই কানে তুললেন না। তাঁর কথা ছিল একটাই যে, আমি যেন তাঁর দরখাস্তটি নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে অবিলম্বে দেখা করি। আমি তাই করেছিলাম। এক সকালে ট্রেনে চট্টগ্রামের টিকিট কিনে চট্টগ্রাম পৌঁছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে বলেছিলাম, ‘জামাল নজরুল ইসলাম এদেশের সম্পদ – তাঁকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা আপনাদেরই সৌভাগ্য।’ উপাচার্য করিম সাহেব আমার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হলেন এবং প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, জামাল নজরুল ইসলামের জন্য একটি অধ্যাপক পদ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অবিলম্বে সৃষ্টি করে তাঁকে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হবে।
দুঃখের বিষয়, ঢাকায় ফিরে এসে কয়েকদিন পরে খবর পেলাম যে কিছু জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পদ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। তাই কিছুদিন পরে গণিত বিভাগেই একটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং তাও দ্বিতীয়বার আমার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ করার পর। যা হোক, শেষ পর্যন্ত সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতা অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে যোগদান করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য উন্নত মানের একটি গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। এর অধীনে অনেক শিক্ষার্থী মাস্টার্স ও পিএইচ.ডি. করেছে এবং তাদের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো অবকাশ নেই।
একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিশ্বতত্ত্ববিদ ও অর্থনীতিবিদ জেএন ইসলাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে হকিং বলেছিলেন, ‘জেএন ইসলাম আমার রুমমেট, বন্ধু এবং আমরা ছিলাম পরস্পর পরস্পরের শিক্ষক। জামাল নজরুল ইসলাম সেরা। আমি তার কাছে কিছুই না।
সারা বিশ্বে বিজ্ঞানী মহলে জেএন ইসলাম জিনিয়াস ইসলাম নামেও পরিচিত ছিলেন। জাপানি প্রফেসর মাসাহিতো বলেছেন, ‘ভারতের বিখ্যাত জ্যোতিপদার্থ বিজ্ঞানী জয়ন্ত নারলিকা জেএন ইসলামের সহপাঠী ছিলেন। ফ্রেডরিক হয়েল, নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ব্রায়ান জোসেফসন, স্টিফেন হকিং, প্রফেসর আব্দুস সালাম, রিচার্ড ফাইনমেন, অমর্ত্য সেন প্রমুখ ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাদের মুখে আমি অনেক বার জেএন ইসলামের কথা শুনেছি। জেএন ইসলামের ‘দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স’ লেখা হয়েছে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে কিন্তু হকিংয়ের ‘অ্যা ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম’ লেখা হয়েছে ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে। দুটি গ্রন্থ তুলনা করলে নিঃসন্দেহে জেএন ইসলামের বইটি যে কোনো বিবেচনায় শ্রেষ্ঠ। কিন্তু ব্রিফ হিস্টরি অব টাইম নিয়ে আমরা যে তোলপাড় করেছি, জেএন ইসলামের আল্টিমেট ফেইট নিয়ে তার এক সহশ্রাংসও করিনি।
হকিং তাঁর মূল্যবান গবেষণা সময়ের অধিকাংশই ব্যয় করতেন বাঙালি প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তাদের সম্পর্ক ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব থেকে পারিবারিক বন্ধুত্বে উন্নীত হয়েছিল। হকিংয়ের জ্যেষ্ঠ ছেলে রবার্ট, কন্যা লুসি এবং কনিষ্ঠ ছেলে থিমোতি জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গ খুব পছন্দ করতেন। জামাল নজরুল ইসলামের দুই মেয়ে সাদাফ যাস সিদ্দিকি ও নার্গিস ইসলাম ছিলেন তাদের খুব আদরের। সাদাফ যাসের আমন্ত্রণে লুসি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে লিট ফিস্টে যোগ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ এসেছিলেন। অর্থশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অমর্ত্য সেন ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে এলে বন্ধু জামাল নজরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করার জন্য চট্টগ্রাম চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী আবদুস সালাম বাংলাদেশে এলে বিমান বন্দরে নেমে বলেছিলেন, জেএন ইসলামকে খবর দিন। ওই সফরে জেএন ইসলামকে একটা পদকও দিয়েছিলেন প্রফেসর আবদুস সালাম। উল্লেখ্য, বয়সে জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন হকিংয়ের সিনিয়র কিন্তু আবদুস সালাম এবং অমর্ত্য সেনের জুনিয়র।
জেএন ইসলামের লেখা এবং ক্যাম্ব্রিজ থেকে প্রকাশিত ‘রোটেটিং ফিল্ডস ইন জেনারেল রিলেটিভিটি’ বইটাকে বলা হয় আধুনিক বিজ্ঞানের একটি অদ্বিতীয় বই। সেটা নিয়ে অধিকাংশ বাঙালি কিছুই জানে না। নিজের ঘরের মানুষের কৃতিত্বের খবর যদি ঘরের মানুষ না রাখে তাহলে বাইরের লোকে রাখবে কেন? জেএন ইসলামের ‘দি আল্টিমেট ফেইট অফ দি ইউনিভার্স’ ছাড়া আর কোনো বাঙালির বই হিব্রু ভাষায় অনূদিত হয়নি।
জামাল নজরুল ইসলাম ছিলেন আপাদমস্তক দেশপ্রেমিক। নিজের আয় থেকে অর্থ জমিয়ে দরিদ্র ছাত্রদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণ বন্ধের উদ্যোগ নিতে বলেছিলেন। সর্বোপরি, বিদেশে সহস্র পাউন্ডের লোভনীয় চাকরি ছেড়ে দিয়ে জামাল নজরুল ইসলাম বাংলাদেশে চলে এসেছিলেন। শুধু তাই নয়, মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশে ফেরার আগে জামাল নজরুল ইসলামের পরামর্শ চাইলে তিনি, জাফর ইকবালকে দ্রুত দেশে ফেরার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছিলেন।
দেশের জন্য, দেশের বিজ্ঞানচর্চার জন্য তিনি যে পরিমাণ আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা সত্যিই অনন্য।নিভৃতচারী ও প্রচারবিমুখ এই গুণী বিজ্ঞানী ২০১৩ সালে ৭৪ বছর বয়সে পরলোকগত হন।
তথ্যসূত্রঃ গুগল, দেশি বিদেশী ম্যাগাজিন, প্রথম আলো, ফেইসবুক,
উনাকে নিয়ে আরও অনেক কিছু লেখা যায়। কিন্তু লেখা বড় হলে তো আমরা পড়বো না। এতো পড়ার সময় কই?
এতোকিছু বলার উদ্দেশ্য হলো আমরা কেন উনাকে চিনি না? জানি না?
এতোকিছু বলার উদ্দেশ্য হলো আমরা কেন উনাকে চিনি না? জানি না?
কারণ আমাদের মিডিয়া তাদের নিয়ে নিউজ করে না। হাইপ তুলেন না। বইয়ে তাদের নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয় না। আমার লজ্জা লেগেছিল উনাকে আমি মাত্র বছর দুয়েক আগে কেন চিনেছি? অথচ স্টিফেন হকিং কে কতো আগে থেকেই চিনি। আমার লজ্জার কারণ কি শুধু আমিই? এর দ্বায়ভার পুরো দেশের। মিডিয়ার।
জামাল নজরুল ইসলাম স্যার ছিলেন দেশের গর্ব।
জহিরুল হক জাবেদ
অনেক কিছু জানতে পারলাম, ধন্যবাদ।
ReplyDelete