0
গোল্ডেন রেশিও(Golden ratio):

এই পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্র এবং বিশ্বভ্রম্মান্ডসবকিছুই আবর্তিত হয় এক সুশৃঙ্খল নিয়মের মধ্যে দিয়ে । আর সকল সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে নিখুঁত সামঞ্জস্যতা । এই বিশ্বভ্রম্মান্ডের প্রতিটি বস্তুর নিখুঁত অবকাঠামোগত মান হচ্ছে ১.৬১৮ । এই মানকে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও(Golden Ratio) ।


নিচের সংখাগুলোর দিকে একটু মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন,


১, ১ , ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫, ৮৯, ১৪৪, ২৩৩, ৩৭৭, ৬১০, ৯৮৭, ১৫৯৭, ২৫৮৪, ৪১৮১, , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , ,


এই যে সংখ্যাগুলো, এদেরকে বলা হয় ফিবোনাচ্চি সংখ্যা। অর্থাৎ, আগের সংখ্যার সাথে পরের সংখ্যাটা যোগ করলেই আরেকটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যা পাওয়া যায়।


উপরের সংখ্যা গুলোতে দেখুন প্রতিটি সংখ্যা তার আগের দুইটি সংখ্যার যোগফলের সমান।এটি একটি সংখ্যার সিরিজ।এই সিরিজটি আবিস্কার করেছেন ইটালিয়ান গনিতবিদ ফিবনেসি।তাই এটিকে ফিবনেসি সিরিজও বলা হয়।

এবার প্রত্যেক সংখ্যাকে তার আগের সংখ্যা দ্বারা ভাগ করুন।ভাগ করতে করতে দেখবান প্রত্যেক ভাগফল ১.৬১৮০৩৩ এর কাছাকাছি এবং ১৩তম সংখ্যার পরে সবগুলো ভাগফল একই হয় অর্থাৎ ১.৬১৮০৩৩ হুয়।যেহেতু এই ভাগফলটি দুটো সংখ্যার অনুপাত,তাই ভাগফলটিকে বলা হয় গোল্ডেন রেশিও বা সোনালী অনুপাত।


সহজ করে বলি, আপনি যদি একটি সরলরেখাকে এমন দুই ভাগে ভাগ করেন যেন বড় অংশটুকুকে ছোট অংশটুকু দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল ১.৬১৮০৩৩ হয়,তাহলে ১.৬১৮০৩৩কে গোল্ডেন রেশিও বলা হয়।

নাম লিওনার্দো ফিবোনাচ্চি। জন্ম ইটালিতে। তিনি-ই সর্বপ্রথম এটি আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারেই এই ধারার নাম হয়েছে, ফিবোনাচ্চির ধারা! ১২০৩ খ্রিষ্টাব্দে খরগোশের প্রজননে তিনি সর্বপ্রথম এই ধারার অস্তিত্ব দেখতে পান। অর্থাৎ দুটি খরগোশ থেকে যদি প্রজনন হয়, আর একটা খরগোশও না মরে, তাহলে যদি ১০ মাস পর ৫৫ টা খরগোশ হয় ১১ মাস পর হবে ৮৯ টা, ১২ মাস পর হবে ১৪৪ টা।



গোলাপ ফুলের পাঁপড়ি ছিড়েছেন কখনো? ছিঁড়লেও নিশ্চয়ই গুণে দেখেন নি, কয়টা পাঁপড়ি থাকে। ১৩, ২১, ৩৪, ৫৫ কিংবা ৮৯ টা। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া প্রায় সব ফুলই এই নিয়ম মেনে চলে। অদ্ভুত মনে হচ্ছে? আসুন আরো সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। আপনি সায়েন্স হোন আর আর্টস হোন, অঙ্কে দুর্বল হোন, আর সুপার ডুপার হোন খুব সহজেই হিশাবটা করতে পারেন।

.

কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব ফুল এই নিয়ম মেনে চলে।
শুধু ফুল নয়, প্রকৃতির অনেক জায়গায় এ সংখ্যা পাবেন। ফলেও ফিবোনাচ্চি সংখ্যা দেখা যায়। আনারসের "চোখ" গুণে দেখুন। এক সারিতে ৮ টা কিংবা ১৩ টা থাকে।
.
.
এখানেই শেষ না। পাশাপাশি দুটি ফিবোনাচ্চি সংখ্যার যদি পরেরটাকে আগেরটা দিয়ে ভাগ করেন ১.৬১ হয়। অর্থাৎ ২৩৩ কে ১৪৪ দ্বারা কিংবা ৩৭৭ কে ২৩৩ দ্বারা ভাগ করলে ১.৬১ পাওয়া যাবে। একে বলে গোল্ডেন রেশিও। মানবদেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গে এই গোল্ডেন নাম্বারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। একটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যকে ১.৬১ দ্বারা গুণ করলে আরেকটা অঙ্গের দৈর্ঘ্যের সমান হয়।


গোল্ডেন রেশিও আমাদের সব জায়গায় এমনকি সবক্ষেত্রে ।পৃথিবীর প্রায় সবকিছুই গোল্ডেন রেশিও মেনে চলে।


প্রথমে আমরা দেখি চিত্রকর্ম এবং স্থাপত্যকলায়।লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি তার রহস্যময়ী মোনালিসা তে গোল্ডেন রেশিও প্রয়োগ করেছেন।অর্থাৎ মোনালিসার মুখমন্ডল বরাবর একটি আয়তক্ষেত্র আঁকলে এর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের অনুপাত ১.৬১৮০৩৩।


আবার স্থাপত্য পার্থেননের নকশা গোল্ডেন রেশিওকে অনুসরন করে।

আগ্রার তাজমহল,তারপর বড় বড় পিরামিড গুলোর সবই গোল্ডেন রেশিওতে করা।

আমাদের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাতও ১.৬১৮০৩৩ এর কাছাকাছি।গোল্ডেন রেশিওতে যে কোনো জিনিস সবচেয়ে সুন্দর হয়।


ভুগোলেও কিন্তু গোল্ডেন রেশিও পাওয়া যায় যেমন মক্কা থেকে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিন মেরুর দুরত্ত যথাক্রমে ৭৬৩১.৬৮কিলোমিটার এবং ১২৩৪৮.৩২২ কিলোমিটার ।১২৩৪৮.৩২২কে ৭৬৩১.৬৮ দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল ১.৬১৮০৩৩ হয়।


প্রকৃতিতেও গোল্ডেন রেশিওর ছড়াছড়ি।মানুষের নাভী থেকে মাথার উপর পর্যন্ত দূরত্ব এবং নাভী থেকে পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাত১.৬১৮০৩৩ ।আবার কাধ থেকে নাভী পর্যন্ত এবং নাভী থেকে দুই উরুর সন্ধিস্থল পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাত ১.৬১৮০৩৩ ।আবার কাঁধ থেকে হাটু পর্যন্ত এবং হাটু থেকে পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাত ও ১.৬১৮০৩৩।কি আশ্চর্য তাই না?শুধু কি তাই? আপনার হাতের আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত দূরত্ব এবং আঙ্গুলের মাথা থেকে কব্‌জি পর্যন্ত দূরত্ব ও কিন্তু গোল্ডেন রেশিও!একবার মেপে দেখুন তো।


ধোয়ার কুন্ডলীকে দেখেছেন কিভাবে উপরে উঠে?ধোয়া যখন কুন্ডলী পাকাতে পাকাতে উপরে উঠে তখন কিন্তু কুন্ডলীর আয়তন বৃদ্ধি পায় ,এই আয়তন বৃদ্ধি পায় ফিবোনেসির সিরিজ ১,১,২,৩,৫,৮,১৩,২১, , , , ইত্যাদির হিসেবে ।


সুর্যমুখী তো দেখাছেন?সুর্যমুখীর পাপড়ি সংখ্যাও বৃদ্ধি পায় এই ফিবোনেসের ধারা হিসেবে।আপ্নার আশেপাশে সুর্যমুখী ফুল থাকলে একটা নিয়ে আসুন, হিসেবটা মিলিয়ে নিন।পাইন গাছের ফুলের ও একই হিসেব।সামুকের বৃদ্ধি হয় প্যাচানো অবস্থায় তাইনা? সামুক ও বৃদ্ধি পায় এই ফিবোনিসের ১,১,২,৩,৫,৮১৩,২১, , , ,ধারা ধরে।গাছ যত বড় হয় ডালের সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পায়, এটিও বৃদ্ধি পায় গোল্ডেন রেশিও হিসেবে।এমন কি D.N.A ও গোল্ডেন রেশিও মেনে চলে।এরকম আরো অনেক উদাহারন আছে। তাহলে বলা যায় গোল্ডেন রেশিও হচ্ছে প্রকৃতির ভাষা।

.
বর্তমানে মিউজিকে এর বহুল ব্যাবহার দেখা যায়। বড় বড় ব্যান্ড দলগুলো বিভিন্ন মিউজিকে ফিবোনাচ্চির ছন্দ ব্যাবহার করেছে। এ মিউজিকগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

....ফিবোনাচ্চির সংখ্যাগুলো নিয়ে পাশাপাশি বর্গ আঁকুন। অর্থাৎ প্রথমটা দুই সেমি হলে পরেরটা তিন পরেরটা পাঁচ....এরপর এদের স্পর্শক আঁকলে দেখা যাবে, এটা হাতির শুঁড়ের মতো হয়। বহু প্রাণীর লেজ এরকম বাঁকানো থাকে।
.
পাখিরা যখন দলবেঁধে আকাশে ওড়ে, গণণা করে দেখবেন। প্রতি দলে হয় ১৩ টা নাহয় ২১ টা নাহয় ৩৪ টা.......অর্থাৎ ফিবোনাচ্চির সংখ্যানুযায়ী এরা দলে বিভক্ত থাকে। যদি শিকারীরা কোনো একটা পাখিকে মেরে ফেলে, এরা দল ভেঙ্গে আবার ফিবোনাচ্চি সংখ্যানুযায়ী দলবদ্ধ হয়।


সত্যি-ই এটি প্রকৃতির এক অদ্ভুত রহস্য!


এই উদ্ভিদ-প্রাণীদের গণিত শেখালো কে?


Post a Comment

If you learn something from our post please comment...

 
Top