0

সাগুদানার সাথে কমবেশি সবাই পরিচিত। অনেকে ভাবেন এটা কি গাছের ফল?
 নাকি ফলের বিচি?
 এই প্রশ্ন ছোটকালে আমারও ছিল, অনেক জনকে বিরক্ত করেছি। মূলত সাগুদানা ফল, ফুল, বিচি কোনটা থেকেই আসেনা। এর উৎপত্তি মূলত এক প্রকার তাল গাছের মজ্জা থেকেই। সাগুদানাকে ইংরেজিতে Sago pearls বা "মুক্তো সাগু" বলা হয়। কোন কিছুর সাথে মিশালে এটা আলাদা হয়ে থাকে এবং মুক্তোর মত চিক চিক করে বলে বলেই এমন নামের উৎপত্তি। খাদ্য সামগ্রীকে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় করার গুনের কারণে সাগু দানা সারা বিশ্বে সমাদৃত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Metroxylon sagu. এই Metro শব্দটি গ্রীক থেকে এসেছে। যার অর্থ "বৃক্ষ অভ্যন্তরের নরম অংশ"। নামের সাথে সাগুর উৎপত্তির মিল আছে। সে হিসেবে 'সাগু' শব্দটি বাংলা নয়। বিদেশী শব্দ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ যথাক্রমে, ইন্দোনেশিয়া, নিউ গিনি, পাপুয়া নিউ গিনি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সুমাত্রা অঞ্চলে জন্মে থাকে।

এই গাছটি দেখতে আমাদের দেশের তাল ও সুপারী গাছের মাঝামাঝি ধরনের একটি গাছ। লম্বায় ২৫ মিটার তথা ৫৫ হাত পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এই গাছে জীবনে মাত্র একবার ফুল আসে। ফুল আসার পরে গাছটি মারা যায়। স্বাস্থ্য-ভেদে একটি গাছ ৭ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ফুল দেয়। যখন ফুল আসার সম্ভাবনা দেখা দেয়, তখন গাছটিকে কেটে ফেলতে হয়। সাধারণত তাল প্রজাতির গাছগুলোর ভিতরের অংশ মাংসল, নরম ও আঁশযুক্ত। সাগু গাছেরও একই চরিত্র। তবে সাগুর গাছের ভিতরের অংশ মাংসল অংশ নরম ও আঁশযুক্ত। গাছ কাটার পরে এটাকে ছিঁড়ে মাংসল অংশ জলে ভিজিয়ে রেখে কিংবা জল দিয়ে কচলালে এটার মাংস আশ থেকে আলাদা হয়ে যায়। এই মাংস আটার গুড়োর মত সাদা ও মিহি হয়। জলে ভিজালে ভুট্টার কাইয়ের মত আঠালো দেখায়। মূলত এটাই সাগুর মূল কাঁচা মাল। পরবর্তীতে মেশিনের সাহায্যে নির্দিষ্ট আকৃতি দিয়ে সাগু দানায় পরিণত করা হয়। একটি সাগু গাছ থেকে ১৫০ থেকে ৩৫০ কেজি পর্যন্ত সাগু গুড়ো পাওয়া যায়।
সাগু খুবই উপকারী একটি ভেষজ। এটি খুব সহজেই হজম হয় ও দ্রুত শরীরে শক্তি যোগায়। যার কারণে অসুস্থ মানুষকে এটা বেশী মাত্রায় খাওয়ানো হয়। এটি পেশী সংকোচনে দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যার কারণে ফোঁড়া পাকানোতে এটার ব্যবহার লক্ষণীয়। শরীরে জলের ভারসাম্য রক্ষা করে, অর্থাৎ এটা নিজেই শরীরের ভিতরে জল ধরে রাখে, তাই ডাইরিয়া রোগীদের জন্য ডাক্তারেরা পরামর্শ দেয়। এটাতে চর্বির পরিমাণ খুবই কম থাকায় হার্টের রোগীদের জন্য ভালো একটি খাবার। কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করার জন্য সাগু খুবই উপকারী।
সাগুর নির্দিষ্ট কোন স্বাদ নেই। তাই এটাকে যার সাথে যোগ করা হয়, তারই স্বাদ গ্রহণ করে। ফলে আইসক্রিম, শরবত, পুডিং, চা সহ নানাবিধ মিষ্টান্ন দ্রব্যে এটার ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলছে। তাছাড়া এটাকে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখলে তার শরীর থেকে পাতলা ঝিল্লী বের হয়। যেটা তাকে আলাদা বিশেষত্ব দান করে। কফির তরলে রাখলে কফির বর্ণটাকে চিকমিকিয়ে আরো সুন্দর করে তোলে! সেভাবে আইসক্রিমেও একই আচরণ করে। এটার বর্ণ স্বচ্ছ-সাদা এবং চরিত্র কিছুটা তোকমার মত। তোকমার বর্ণ কালো গায়ে ঝিল্লি তৈরি হয়। আজকাল এই দুটোকে দিয়ে ভিন্ন মাত্রার নান্দনিক সব খাবার উপকরণ তৈরি হয়।

Post a Comment

If you learn something from our post please comment...

 
Top