আজ সকাল টা সুন্দর এক টা ভালাবাসা খুব সুন্দর করে সেজেছে আজ আরশি। ভার্সিটিতে থাকতে সাজুনি হিসেবে খুব পরিচিতি ছিল ওর। সারাদিন মুখে শসা,মধু,বেসন মাখত।অভীক খুব বিরক্ত ‘তোমার এতো সাজার কি দরকার তুমি আমার কাছে সবসময় সুন্দর’। ‘আরে! আমি কি এজন্যে এতো সাজি? আমার ভালো লাগে সাজতে’। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে হাসি পায় আরশির। কতোটা বদলে গেছে ও!!সময়ের নিষ্ঠুর করাঘাতে যন্ত্রের মতো জীবন চলছে।কতো দিন হয়ে গেল অভীক আর ও ঘুরতে যায়না একসাথে।অথচ একটা সময় ছিল বৃষ্টি হলেই অভীক অনেকগুলো কদমফুল নিয়ে হোস্টেলের নীচে এসে ওকে ডেকে পাঠাতো। তারপর সারাদিন বৃষ্টিতে দুজনের রিকশা ভ্রমন। মাঝে মাঝে ছাউনি দেয়া ঘরের নীচে আশ্রয় নিত। অভীক অপলক নয়নে তাকিয়ে থাকতো আরশির দিকে। ‘এই ছ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছো কেন?’ ‘তোমার চোখেমুখে যে চঞ্চলতা খেলা করছে তা দেখছি’। অভীকের পাগলামিগুলো ভেবে আজও হাসি পায় আরশির। অভীকের সাথে পরিচয় খুব অদ্ভুতভাবে। আরশির ফ্রেন্ড ফাহিমের রুমমেট অভীক।আরশির হাসিখুশি স্বভাবের কথা শুনে নিজের আগ্রহেই অভীক একটা এসএমএস করে।
আরশি প্রথমে পাত্তা দেয়নি।পরে যখন শুনল ফাহিমের রুমমেট রেসপন্স করলো।এভাবেই পরিচয়। শুধুই এসএমএস এ বন্ধুত্ব।কখনও কল করা হয়নি।অথচ দিনে ১০-১২টা এসএমএস চালাচালি। আরশি সিদ্ধান্ত নিল একদিন সে হঠাত হাজির হবে অভীকের ভার্সিটিতে।এই ছেলেটার প্রোফাইল পিকচারেও ছবি নেই।অদ্ভুত তো!!
‘ফাহিম,কই তুই?
আমি তোর ভার্সিটিতে।‘
‘দাঁড়া আসতেসি’।
‘অভীক,আরশি আসছে।চল দেখা করবি’।
‘আরশি হঠাৎ?আমি যাবো না।তুই যা’।
অভীক্ না আসায় খুব মন খারাপ হল আরশির। নিজের উপর মেজাজ খারাপ হলো। এভাবে অভীককে নাজানিয়ে আসা উচিত হয়নি। নিজের বেডে শুয়ে অভীক।ভাবছে আরশির সাথে দেখা করতে এত দ্বিধা কেন হচ্ছে? হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল।
‘অভীক,আমি চলে যাচ্ছি।ভাল থেকো'
কি জানি এক আকুতি ছিলো সেই কন্ঠে।কোনও মতে শার্ট চাপিয়ে নিচে নামল অভীক। দৌড়ে ভার্সিটি গেটে গেলো অভীক।এদিক ওদিক খুঁজছে আরশিকে। ‘এই ছেলে এতো দৌঁড়াতে বলেছে কে?’ ‘চলে এলে কেন?আমার সাথে রাগ করেছো? চিনলে কিভাবে আমাকে?’ ‘তোমার মতো করে কেউ খুঁজবেনা আমাকে’ কথাটা বলেই লজ্জা পেয়ে গেল আরশি। ‘চলো তোমাকে বৃষ্টি ভ্রমন করাই’। ‘সত্যি?চলো…’
এভা বেই পথচলা শুরু।হুটহাট ঘোরাঘুরি,কবিতা শোনানো,নৌকা ভ্রমন… দুজনের অনুভূতিগুলো এক সুরে গেঁথে গেলো। বাইরে মেঘ করেছে।ঘন কালো আকাশ। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো আরশি।ঝড়ের আগমুহূর্তেরঘন কালো আকাশ ওর অনেক ভালো লাগে।অভীক আসছে না কেন? ‘হ্যালো,তুমি কোথায়?’ ‘অফিসে…অনেক কাজ’ ‘ঝড় আসবে তো।তাড়াতাড়ি এসো’ ‘চেষ্টা করব’ ওর আর অভীকের ছবিটা দেখলো আরশি। অভীকদের গ্রামের বাড়ীতে তোলা।বিয়ের পর অখানে গিয়েছিল ওরা।স্বপ্নের মতো কাটছিল দিনগুলা। জ্যোৎস্না রাতে পুকুরপাড়ে বসে কতো কথাবলা,অভীকের কাঁধে মাথা রেখে আরশিরস্বপ্ন দেখা। টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমানো। ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে হাত ধরে হেঁটে চলা।দুটো বছর হয়ে গেলো বিয়ের।
আজ ওদের দ্বিতীয় বিবাহবার্ষিকী।অ ভীক কি ভুলে গেলো? আরশির খুব কান্না পাচ্ছে।ওর বান্ধবীরা বলতো ‘ছেলেরা প্রেমিক থাকার সময় কিছু ভুলেনা,কিন্তু স্বামী হলেই কিছু মনে রাখে না’ আরশির কাছে ফালতু মনে হতো এসব কথা। তবে কি ওর অভীকও এমন? আরশিকে বিয়ে করার জন্যে কম কাঠখড় পোড়াতে হুয়নি অভীকের। আরশির বাবার এক কথা ‘ডাক্তার মেয়ের জন্যে ডাক্তার ছেলেই পারফেক্ট' অভীকের ইঞ্জিনিয়ার আর আরশির নিজের ডাক্তার হওয়াটাকে অভিশাপ মনে হতো। অভীক সবেমাত্র চাকরিতে ঢুকেছে।আরশির ফাইনাল ইয়ার। বাসায় বিয়ের জন্যে পাত্র খোঁজা হচ্ছে। আরশি বাসায় সাফ জানিয়ে দিলো ‘ইন্টার্নীর আগে বিয়ে করব না’। অভীক এরমধ্যে ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিলো। ফাইনাল শেষ হতেই বাসায় অভীকের কথা জানালো আরশি। আরশির বাবা তো রাজি না।‘ডাক্তার যদি ডাক্তার বিয়ে না করে ,তাতে নাকি বনিবনা হয়না,সময় মিলেনা,ক্যারিয়া র করা হয়না’…আরশিও জিদ ছাড়বেনা।খাওয়া দাওয়া বন্ধ।আদরের মেয়ের জিদের কাছে হারতে হলো আরশির বাবাকে।
এখন অভীককে নিয়ে গর্বের শেষ নেই আরশির বাবার। বিয়ের দুমাস পর এফসিপিএস এর ফর্ম এনে দিল আরশিকে অভীক। ‘নাও পূরণ করো আর প্রস্তুতি নাও’। ‘এখনি?’ ‘হুম,দিতে হবে’। রাত জেগে পড়তে থাকা আরশিকে কফি বানিয়ে দেয়া,বাসার কাজে সাহায্য,আরশির পড়ার জন্যে আলাদা রুম করে দেয়া-সবই অভীক করেছে। ‘এই তুমি এতো পড়তে বলো কেন?’ ‘তোমার বাবা যখন তোমাকেবিদায় দিচ্ছিলেন,আমাকে জড়িয়ে ধরে কি বলেছিলেনজানো?’ ‘কী?’ ‘আমার মেয়েকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন আমার। তুমি স্বপ্নগুলো পূরণ করতে দিও।আব্বুর ঐ কথাটা আজো আমার কানে বাজে।আব্বু অনেক বিশ্বাস করে তোমাকে দিয়েছেন আমার হাতে। আমি সেই বিশ্বাসটা রাখবো’ আরশি শক্ত করে অভীকের হাতটা ধরে বলে ‘তুমি এতো ভালো কেনো?’ কি যে উলটাপালটা ভাবছে আরশি!অভীকের ব্যস্ততা তো ওর জন্যেই।আরশিই বা কতোটুকু সময় দেয়? অভীক কোনো অভিযোগ করেনা।দুজনেই অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।ওদের ভালোবাসা একটুও কমেনি,তবুও কোথায় যেন সুর কেটে গেছে।সেই সুরটা ফিরিয়ে আনতে হবে।নতুন একজন যে আসছে।
নিজের পেটে হাত রাখে আরশি।আজ ম্যাডাম কনফার্ম করলো আরশি প্র্যাগনেন্ট।আর শির খুশিতে কান্না চলে আসছে।আজকের এই স্পেশাল দিনে সুখবরটা দিবে অভীককে।কলিংবেল বাজতেই দৌড়ে দরজা খুলে দিল আরশি। ক্লান্তভঙ্গিতে ঢুকল অভীক। ‘খুব খিদে পেয়েছে।আজ হসপিটাল যাওনি?’ ‘আমি ছুটি নিয়েছি’ কোনোমতে কান্না চেপে বলল আরশি। অভীক একবারও তাকালো না,বলল না ওকে কেমন লাগছে।চোখ মুছতে মুছতে খাবার দিলো টেবিলে। ‘আরশি আমার তোয়ালেটা দাও’ বেডরুমে ঢুকে মোমবাতির আলো দেখে হতবাক আরশি। টিটেবিলে দুটা মোমবাতি আর একটা কেক। ‘আমার অভিমানী বৌ আর কতো কাঁদবে?’ পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে অভীক। ‘তোমার মনে ছিলো?’ ‘আলবৎ ছিলো।অফিসের এতো কাজের চাপ সামলে নিয়ে এলাম তোমার পছন্দের ব্ল্যাকফরেস্ট’ । মোমবাতিতে ফুঁ দিয়ে কেক কাটলো দুজন। ‘আমি কিন্তু দুপিস কেক খাব। আমি একা না এখন’। ‘মানে?’ ‘মানে এই যে আপনি জুনিয়র অভীক অথবা জুনিয়র আরশিকে কেক দিবেন না?’অভিকের হাত টেনে নিয়ে বলে আরশি।
‘আরশি তুমি আমাকে অনেক বড় গিফট দিলে আজ’। আরশিকে দুহাতে কাছে টেনে নেয় অভীক ‘তোমাকে আমি কম সময় দেইআরশি।
Post a Comment
If you learn something from our post please comment...