একটু সময় নিয়ে পড়ুন। অনেক ভালো লাগবে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যখন চাঁদের আলো নিভে গেলো মেঘেরা ঘুমালো আকাশ জুড়ে বৃষ্টি এল রাত্রি ফুরালো
গান থামিয়ে শান্তার দিকে ফিরে তাকাল তন্ময়.......
__ এই যে.. আমাকে ফেলে একা একা হেটে এলে। কাজটা কি ঠিক করেছ??
শান্তার মজা করার ধরণ বুঝতে কিছুটা সময় লাগে তন্ময়ের তাই উত্তর খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লাগে ।
শান্তাকে রাগিয়ে দিতে অনেক মজা পায় তাই বলল , কেন কেন ?পৃথিবীতে কি হুর পরীর অভাব পড়েছে যে তোমাকে নিতে হবে ।
___ ঠিক ঠিক শান্তা রেগে গেল । তন্ময়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে বেশ করে চাঁদের আলো উপভোগ করছিল।শোয়া থেকে উঠে দুম করে তন্ময়ের চুল টেনে দিল ।
উফফফ করে আওয়াজ করে তন্ময় বলে উঠল ইসস ব্যথা পেয়েছি তো ,
শান্তা মুখ বেকিয়ে বলল....এহ ব্যথা পেয়েছে আপনাকে কি আমি মজা পাওয়ার জন্য চিমটি দিয়েছি যে মজা পাবেন!!
যান কোন কোন হুর পরীর সাথে ঘুরতে ইচ্ছা করে তাদের কে বলেন গিয়ে আদর করে দিবে ।
__তন্ময় বলল তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে বল? আমি কোন হুর পরীর কাছে যামুনা ,শুনলাম ওরা নাকি যাদু টোনা করে । ইসস আমাকে যদি রান্না করে খেয়ে ফেলে mad আমি তোমার কাছেই থাকব আমার জান।
এহ আইছে জানের গুষ্ঠি কিলাই , আমার কাছে থাকা লাগবেনা ।
__ তন্ময় এখন রাগ ভান্গানোর উপায় খুঁজতে লাগল । বলল আচ্ছা যাচ্ছি কিন্তু এই ক্যাম্প এ একা একা তো তোমাকে ভূতে ধরবে ।
শান্তা বলল আমার ভূতে ধরলে বয়েই গেছে , আমিভূত ভয় পাইনা তোমার মত। তন্ময় মনে মনে ভাবছে কি জাদরেল মেয়ে রে বাবা!!
_ আস্তে আস্তে শান্তার দিকে হেটে গেল তন্ময় , অভিমানে গাল ফুলিয়ে পেছন ফিরে বসে আছে শান্তা । তন্ময় কাছে গিয়ে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কোলে তুলে নিল । শান্তা চমকে চিৎকার করে উঠে বলল ছাড়ো .... ছাড়ো বলছি , তন্ময় বলল চুপ করে থাকো নইলে এক্কেবারে ঔ পুকুরে নিয়ে ছেড়ে দিব ।
শান্তা চুপ করল না বলল আমিও দেখে নেব এক মাঘে শীত যায় না বুঝে নিয়েন বুঝলেন।
তন্ময় বলল না যাক কোন সমস্যা নাই সময়ের সদ্ব্যবহার করা প্রতিটি নাগরিকের মূল্যবান দ্বায়িত্ব ।
শান্তা মনে মনে মহা খুশি বাচ্চাদের মত কোলে চড়তে তো বেশ আরাম ই । কে নামতে চায় ।কিন্তু তন্ময়কে খুশিরভাবটা বুঝতে না দিয়ে বলল,,,, কি মতলব কই যান??
তন্ময় কিছু না বলে গান শুরু করল , __ আমি সবাইকেই বলে দেব কি যে একা দীর্ঘরাত হেটে গেছি আমি শান্তাকে কোলে নিয়ে শান্তা আর অভিমান করে থাকতে না পেরে খিল খিল করে হাসতে হাসতে তন্ময়ের গলা জড়িয়ে ধরল ।
তারপর হঠাৎ করে বলল আমি তোমাকে ভালবাসি তন্ময়। তন্ময় হাটা বন্ধ করে দিল তারপর বলল আমি তোমাকে ততটা ভালবাসি যতটা একজন মানুষ বাসতে পারে না।
___শান্তা বলে উঠল তাইলে কি তুমি গরু গো??
তন্ময় চমকে উঠে বলল আবার শুরু ? হ আমি গরু আর আমি আমার গাভীকে অনেক বেশি ভালবাসি ।
শান্তা তন্ময়ের কোল থেকে নামল তারপর হাত ধরে হাটতে শুরু করল ক্যাম্পের দিকে। কিছুক্ষন নিঃশব্দে হাটারপর তন্ময়কে বলল আচ্ছা শোন আমি যদি মরে যাই তুমি কি করবে?
তন্ময় না শোনার ভান করে এদিক ওদিন তাকিয়ে বলে এই দেখো ঐ গাছটা চেনো ?? ওটা শিমুল গাছ , তুলাছড়িয়ে আছে।
___শান্তা কোন কর্ণপাত না করে তন্ময়ের সামনে গিয়ে দাড়ায় তারপর তন্ময়কে তার কথা শুনতে বাধ্য করে ।
বলল ধর আমি যদি এখন তোমার কোলে মাথা রেখে মরে যাই?? কত্ত মজা হবে তাইনা।শান্তা জানে এসব কথা এই লক্ষী ছেলেটা একটুও সহ্য করতে পারেনা,শান্তা মরে গেলে তন্ময়ের কি হবে তা শান্তা ভাল করেই জানে। তাও ভালোভাবে চেতানোর জন্য বলল আমি মরে গেলে তুমি কাকে বিয়ে করবে চল ঠিক করি।
তন্ময় ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল চুপ করো এসব ফালতু কথা বন্ধ কর প্লীজ।
___শান্তা জোরে কথা একদন সহ্য করতে পারেনা তাই আরো রেগে গিয়ে বলল কিসের ফালতু কথা? তুমি জাননা আমি আর বেশিদিন বাঁচব না ?? তুমিজান না আমার ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে । সবকিছু এমন ফালতু মনে হয় কেন তোমার।আমি মরব সেটা তো চিরন্তন সত্য কথা , কেন বার বার বল ফালতু কথা ।
তন্ময় একটা ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল,শান্তার ব্লাড ক্যান্সার এই কথাটা গত একবছর ওকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে । এই মেয়েটা ওর জান , ওর কিছু হলে তন্ময় কিভাবে থাকবে এসব ভাবলে তন্ময়ের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসে । একটা কথাও বলতে পারল না ঝড়ঝড় করে কান্নায় ভেন্গে পড়ল তন্ময়।
____ ঘটনা এত খারাপ হবে ভাবতে পারেনি শান্তা , তন্ময়কে আদর করে বাবু ডাকে সে। ছোট বাচ্চাদের মত এই ছেলেটিকে কাঁদতে দেখে শান্তা স্তব্ধ হয়ে যায় , মাটিতে বসে দুহা্তে বাবুকে জড়িয়ে ধরে কান্না থামানোর চেষ্টা করে কিন্তু গলা দিয়ে একটা স্বরও বের হলনা চাঁদের জ্যোৎস্না এই খোলা মাঠের দুই তরুন তরুনীর নীরব মায়া দেখতে থাকে অপলক। তন্ময় কান্না থামাতে পারেনা ,অঝড় ধারায় চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ভালবাসার ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু।
___কোন ছেলেকে এভাবে কাঁদতে দেখেনি শান্তা ,এই ছেলেটাকে যে ও অনেক ভালবাসে তাও একটুও কাঁদতে পারছে না , জানে আর বেশি সময় নেই তাও এই ছেলেটার অবাধ ভালবাসা পাওয়ার জন্য বাঁচতে ইচ্ছা করে শান্তার , অনেক বেশি ভালবাসা অনুভব করে । তাই আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে আমার লক্ষী বাবু এসো আদর করে দেই , এসো তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে জ্যোৎস্না মেখেদেই, এসো ঘুম পাড়িয়ে দেই । আমার বাবুটা লক্ষী ছেলে , কত্ত ভালবাসি , অনেক ভালবাসি জান পাখিটাকে..................... বিড়বিড় করে কত্ত কথাই না বলতে থাকে শান্তা , তাও তন্ময়ের কান্না থামেনা ।
____ শান্তা ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করেনা শুধু বিড়বিড় করে ভালবাসার কথা বলে যায় তার ভালবাসার মানুষটিকে....................
____আর রাতের আকাশে ম্লান চাঁদটি দুজনের মাথায় জ্যোৎস্নামাখা আশির্বাদ ঢেলে দেয় যেন বলতে থাকে আমার আয়ুটুকুও তোমাদের হোক । গাছের সবুজ পাতারা ছাড়ে কষ্টের দীর্ঘশ্বাস। রাতের পাখিরাও ক্লান্ত হয়ে গান থামিয়ে দেয় কিন্তু তন্ময়ের কান্নার ঝড় চলতে থাকে অবিরত।
Post a Comment
If you learn something from our post please comment...