চুলকানি রোগের ইতিহাস ২,৫০০ বছরেরও পুরাতন। বছরে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা 300 Million বা ৩০ কোটি।
Sarcoptes scabiei নামক এক ধরনের পরজীবী অণুজীব চুলকানি রোগের জন্য দায়ী। এটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ৮পা বিশিষ্ট ও মাত্র 1/3 মিলিমিটার দীর্ঘ অতি ক্ষুদ্র পরজীবী অণুজীব। মানব দেহে চুলকানি রোগ ছড়ায় এই অণুজীবের মহিলা সদস্যদের আকার ০.৩মিমি থেকে ০.৪মিমি আর পুরুষের আকার মহিলাদের চেয়ে অর্ধেক। এই জীবাণু অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়। এই জীবাণু উড়তে বা লাফাতে পারেনা ফলে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে হেঁটে চলাচল করে। এরা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকে ও মারাত্বকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে, ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচের তাপমাত্রায় এদের চলাচল মন্থর হয়ে পড়ে।
এই স্কেবিস রোগ যা চুলকানি নামে পরিচিত একটি মারাত্বক ছোঁয়াচে চর্ম রোগ। বাড়িতে একজন আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও এ রোগে আক্রান্ত হয়। যারা অপরিষ্কার থাকে তাদের এ রোগ বেশি হয়। রাতের বেলা চুলকানি বেড়ে যায়।
কিভাবে ছড়ায় : স্পর্শের মাধ্যমে সাধারণত এ রোগ হয়। তাছাড়া রোগীর ব্যবহৃত কাপড় গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে এ রোগ হতে পারে।
লক্ষণঃ ====
১. আঙ্গুলের ফাঁকে, আঙ্গুলে, বগলে, যৌনাঙ্গে, নাভি ও নাভির চার দিকে ছোট ছোট দানা বা গুটি দেখা দেয়। তবে এ গুটিগুলো মুখ, মাথা বাদে সমস্ত শরীরে দেখা দিতে পারে। গুটি গুলোতে প্রচণ্ড চুলকায় এবং চুলকানি রাতে বেশি হয়।২. চুলকানির গুটিগুলোতে ঘা হতে পারে, যাকে বলে পাঁচড়া।
৩. এ রোগ দেখা দিলে অবশ্যই আর একজন চুলকানি রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস থাকে। অর্থাৎ রোগীর পরিবারের অন্য সদস্যের চুলকানির ইতিহাস থাকে।
কাদের হয় ও কোথায় হয়? ===============
এটা যেকোন বয়সের লোকেদের হতে পারে। বিশেষ করে পরবেশগত কারণে একজনের হলে অন্যজনের মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
#শিশুদের_ক্ষেত্রেঃ গাল, থুতনি ও গলায়, হাতের তালু ও পায়ের নিচে বেশী দেখা যায়।
#অল্প_বয়স্ক_শিশুদের_ক্ষেত্রেঃ মাথা, ঘাড়, কাঁধ, গলা, হাত, পা ও পায়ের পাতাতে হয়ে থাকে।
#যুবক_যুবতীদের বা #পূর্ণ_বয়স্কদের_ক্ষেত্রেঃ হাত, পা, হাতের কব্জি, আঙ্গুলের ফাঁকে, যৌনাঙ্গে ও পেটে হয়ে থাকে।
#অল্প_বয়স্ক_শিশুদের_ক্ষেত্রেঃ মাথা, ঘাড়, কাঁধ, গলা, হাত, পা ও পায়ের পাতাতে হয়ে থাকে।
#যুবক_যুবতীদের বা #পূর্ণ_বয়স্কদের_ক্ষেত্রেঃ হাত, পা, হাতের কব্জি, আঙ্গুলের ফাঁকে, যৌনাঙ্গে ও পেটে হয়ে থাকে।
প্রতিরোধঃ
======১. রোগীর চুলকানি হলে তার বিছানা ও অন্যান্য ব্যবহৃত কাপড় আলাদা করতে হবে।
২. দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. রোগীকে সুস্থ লোকদের সংস্পর্শে আসা বন্ধ করতে হবে।
চিকিৎসাঃ
======১) ১.৫% পারমেথ্রিন যা বাজারে স্কেবেক্স, স্কেরিন, পারমিন ক্রিম ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। যাহা গলা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীরে ভালোভাবে ব্যবহার করতে হবে- রাতে এবং সাত দিন পর আরো একবার একই নিয়মে রাতে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। পরদিন গোসল করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ওষুধ যেন শরীরে কমপক্ষে ১২ ঘণ্টা থাকে।
২) ২৫% বেনজাইল বেনজয়েট লোশন যা বাজারে এসকাবিউল লোশন নামে পাওয়া যায়। এই ওষুধ গলা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরে ব্যবহার করতে হবে- প্রতিদিন একবার পরপর তিন দিন। এই তিন দিন গোসল না করলে ভালো হয়। যদি গোসল করতে হয় তবে গোসলের পর ওষুধ মাখতে হবে।
চুলকানি মারাত্বক অবস্থায় হলে চিকিৎসা ঃ
-----------------------------ক) চুলকানি কমানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ দিতে হবে।
খ) এন্টিবায়োটিক (ফ্লুক্লোক্সাসিলিন বা সেফ্রাডিন) জাতীয় ঔষধ দিতে হবে।
গ) pramoxine lotion বা hydrocortisone cream দেয়া যেতে পারে।
ঘ) IVERMECTIN ১ ডোজ প্রয়োজনে ২-৩ ডোজ দেয়া যেতে পারে চূড়ান্ত মারাত্বক অবস্থায় বিশেষ করে শিশু ও এইচআইভি পজিটিভ রোগীদের ক্ষেত্রে।
প্রাকৃতিক চিকিৎসাঃ
চুলকানী কমে যাওয়ার জন্যে নিচের প্রাকৃতিক ঔষধটি অনেক কাজে দেয়।
ঔষধ প্রস্তুতির উপকরনঃ
(১) এক কেজি নিম পাতা
(২) এক প্যাকেট বা অল্প পরিমান খোলা ইসব গুলের ভুষি
ঔষধ প্রস্তুত প্রনালীঃ
(১) এক কেজি নিম পাতা ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন।
(২) এবার নিমপাতা গুলোকে পাটায় পিষে একদম পাউডারের মতো মিহি করে ফেলুন।
(৩) এক চা চামচের তিন ভাগের একভাগ নিম পাতার গুড়া এবং এক চা চামচ ভুষি ১ গ্লাস পানিতে আধা ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।
(৪) আধা ঘন্টা পর চামচ দিয়ে ভালো করে নাড়ুন।
সেবন প্রক্রিয়াঃ
(১) প্রতিদিন সকালে খালি পেটে, দুপুরে ভরা পেটে এবং রাতে শোয়ার আগে খাবেন।
(২) এভাবে টানা ২১ দিন খেতে হবে।
কার্যকারিতাঃ
ইনশা আল্লাহ এক মাসের মধ্যে ফল পেতে শুরু করবেন।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
হারবাল ঔষুধে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
খাবার দাবারঃ
আগে যেগুলো এলার্জি বা চুলকানি হলে খেতে পারতেন না, ইনশাআল্লাহ এখন সব খেতে পারবেন।
আরো কিছু প্রাকৃতিক চিকিৎসা --------------------
* আর নিমপাতা সেদ্ধ করে ঐ আধা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন কমপক্ষে 1-2 সপ্তাহ।* নিম পাতা ও ফুল বেটে গায়ে লাগাতে হবে।
* নিমের ক্যাপস্যুল (বাজা রে পাওয়া যায়) বা টেবলেট খেতে হবে ৩বেলা।
* রসূন সরিষার তেলের সাথে ভেজে খেতে হবে ও রসূন বাটা সরিষার তেলে গরম করে তা' আক্রান্ত স্থানে ব্যবহার করতে হবে।
* কালোজিরার তেল শরীরে মাখতে পারেন, কালোজিরার ভর্তা বা তেল খাওয়া যেতে পারে।
নোটঃ
ওষুধ ব্যবহারের পূর্ব থেকে শুরু করে ব্যবহার শেষেও কিছু দিন রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র (বিছানার চাদর, বালিশের কভার) ও অন্যান্য ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় গরম পানিতে ফুটিয়ে পরজীবীমুক্ত করতে হবে। চুলকানি চিকিৎসা না করলে কিডনির জটিল অসুখ হতে পারে। তাই চুলকানি রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা একান্ত জরুরী।
Post a Comment
If you learn something from our post please comment...