0
১০ই মহররম আশুরার ইতিহাস

একটি হাদিসের কথা মনে করিয়েই শুরু করছি। 
রাছুল সা. বলেছিলেন “নবী সা.কে যতক্ষন প্রানের চেয়েও প্রিয় মনে করতে পারবে না ততক্ষন সে ব্যক্তি মুসলমান হতে পারবে না।”– হাদিস। আর আমার মতে রাছুল সা. এর পছন্দই উম্মতে মুহাম্মদির পছন্দ হওয়া বাঞ্ছনীয়। আমাদের দেশে কতই না শোক দিবস পালন হয়। মিডিয়ার বদৌলতে মানুষের কান ঝালাপালা হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ ৯০ শতাংশ মুসলিম অধিবাসী হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের প্রানের চেয়েও প্রিয় নবী সা. এর বংশ ইয়াজিদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হওয়ার পর আমাদের দেশের মিডিয়ার লোকজন সেটা প্রচারে বিরত থাকে কি করে সেটা বোধগম্য নয়?

পুরা অগাস্ট মাস জুড়েই টিভি পর্দায় কালো পতাকা দেখা যায়। তাতে কোন কোন দলের মানুষের আপত্তি দেখা যায় কিন্তু মহরম শোকের মাস হিসাবে শোকের চিহ্ন ব্যবহারে কোন মুসলমান সেটায় বিরোধী করার থাকবে না ইয়াজিদের অনুসারী ছাড়া। তারা হয়তো ভুলেই গেছেন যে তারাও যখনই আল্লার দরবারে হাত উঠায় বেহেস্তের জন্য দোয়া করে। কিন্তু বেহেস্তের সর্দার এবং তিঁনার ৬ মাসের মাসুম শিশু আলী আজগর সহ গোটা পরিবার সহ ৭২জনকে যারা হত্যা করেছে তাদের (হত্যাকারী) কথা বেশী বেশী করে মানুষদেরকে জানানো দরকার। 

এই ঘৃনীত লেবাসধারী দাড়ি, টুপি, জুব্বা পরিহিত নামাজী নামধারী মুসলমান ইতিহাসের জঘন্য হত্যাকারীদের নাম যেন প্রতিটি মুসলমানের জানা থাকে সে ব্যবস্থা করা উচিৎ। এই বরবর পাষন্ড হত্যাকারীর দল বলেছিলো তারাতাড়ি হুসাইনের কল্লা কাইটা আনো আসরের নামায যেন কাজা না হয়। ঐ জাহেলের দল চিন্তাও করে নাই নামায পড়ে তাড়া কোন বেহেস্তের আশায়! হ্যায়রে নামাজী। চিন্তায় আসে নাই বেহেস্তের সর্দারের ওখানে স্থান মিলবে কিনা? ঐ জাহেলদের অন্যায় লোক সমাজের সামনে তুলে না ধরে গোপন রাখলে বেহেস্তের সর্দারদের রৌশানল থেকে রেহাই পাবেন না। 

বর্তমান প্রেক্ষাপটে ১০ই মহরম, এই দিনটি যে কি দিবস হিসাবে পালন করা দরকার। বা এই দিনটিতে কি করণীয়। এমনকি কি হিসাবে পালন করা হচ্ছে। সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষেরই জানা নাই। যারা এই দিনটি সম্পর্কে অবগত তাদের মধ্যে কেউ কেউ শোক পালনের উদ্দেশ্যে রোযা রাখে মাছ, গোস্ত খায় না। খায় শুধু দেহের চাহিদা পুরনের জন্য আমিশ বিহীন খাদ্য। আবার একদল আছে যারা রোযা রাখে এবং ভাল ভাল খাবার খেয়ে খুশী উৎযাপন করেন। হ্যায় কোনটা যে সঠিক আগত দিনের ভবিষ্যত বাসীরা কি করে বুঝবে? সেটার তাদের বিবেচনা করবে চিন্তা করবে আশা নিয়েই লিখছি। 

প্রকৃত নবীর উম্মত যারা তারা কিভাবে এই দিনে খুশির দিন হিসাবে পালন করে সেটা বড় নেক্কারজনক বিষয়? কারণ সকলেই জানেন এই দিনেই রাছুল সা. এর চেহারা শাদৃশ্য তিঁনার প্রানপ্রিয় নাতী রাছুল সা. যাদের সন্তান বলে সব সময়ই ডাকতেন। বেহেস্তবাসী পুরুষগনদের সর্দার হযরত হুসাইন আ. এর কল্লা কেটে হত্যা করেছে নামধারী দাড়ি, টুপি, জুব্বা ওয়ালা নামাযী মুসলমানের দল। 

১০ই মহরহ এই দিনটিতে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা আলোচনা করলেই বিচক্ষন ব্যক্তিগন সত্য উদঘাটন করতে সুবিধা হবে এবং সেই মতে এই বৎসর আশুরা পালন করতে সুবিধা হবে।আশুরার দিনে ঘটে যাওয়া কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ঘটনা প্রবাহ নিম্নে:

 এই দিন আদম আ. কে আল্লা সৃষ্টি করলেন এবং এরকম মহরমের এই দিনে ‘মা’ হাওয়ার সঙ্গে মিলিত হন আদম আ. এবং এইরকম একটি দিনেই আল্লা আদম আ. এর তওবা কবুল করেছিলেন। 

 এই দিনেই নূহ আ. এর জাহাজ জুদি পর্বতে (কারবালা প্রান্তরে) এসে থেমে যায়। 

 এই দিনেই ইব্রাহিম আ.কে নমরুদ অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেন এবং ইব্রাহিম আ. রক্ষা পায়। 

এই দিনেই মুসা আ. বনি ইসরাইল বাসীদের নিয়ে নীল নদী পাড়ি দেন এবং মুসা আ.কে তারা করা ফেরাউন দল বল সহ নীল নদীতে ডুবে মরে। 

 এই দিনেই নবী পরিবারের আখেরী নিশান হযরত হুসাইন আ. তার দুধের শিশু সহ এজিদের হাতে নিমর্মভাবে শহীদ হন। 

 ইউনুস আ. মাছের পেট থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। 

 হাদিসে এরকমও শুনা যায় যে ১০ই মহরমেই এই দুনিয়া ধ্বংস হবে। উক্ত ঘটনাগুলি সবই ১০ই মহরম তারিখেই সংঘঠিত হয়েছে

★ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা আসমান, জমিন, লৌহ, কলমকে সৃষ্টি করেছেন।

★ ১০ই মহররমের এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।

★ এই দিনে হযরত আদম (আঃ) এর দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করেন।

★ এই দিনে আল্লাহর দয়ায় হযরত নূহ (আঃ) এর নৌকা মহাপ্লাবনের পর তীরে এসে ভিড়ে।

★ এই দিনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) নমরুদের তৈরী অগ্নিকুন্ড থেকে আল্লাহর দয়ায়
রক্ষা পান।

★ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) কে 'খলিলুল্লাহ' উপাধি দান করেছিলেন।

★ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউনুস (আঃ)-কে মাছের পেট থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

★ এই দিনে হযরত ইউসুফ (আঃ) আল্লাহ তায়ালা কঠিন বিপদ থেকে মুক্ত করেছিলেন।

★ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আঃ)
এর সঙ্গে ৪০ বছর পরে মিলিত করেছিলেন।

★ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা হযরত আইয়ুব (আঃ)-কে কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য দান করেছিলেন।

★ এই দিনে আল্লাহ তায়ালা কাফের ফিরআউনকে নীল নদে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।

★ ১০ই মহররমে আল্লাহ তায়ালা হযরত ইদ্রিস (আঃ)-কে ওফাত দান করেন ও
চিরস্থায়ীভাবে জান্নাতে দাখিল
করেন।

★ ১০ ই মহররমে আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা (আঃ)-কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন,
আবার আসমানেও উঠিয়ে নেন এবং রাসূল (সঃ) এর উম্মত হিসেবে আবার পৃথিবীতে
প্রেরণ করবেন।

★ এই দিনে হযরত ইমাম হোসাইন সহ আহলে বায়তের ষোলো জন শহীদ হন।
 এমন আরো কত কিনা ঘটেছে এবং ঘটবে। ভালভাবে চিন্তা করে এখন থেকে সামনের বছর গুলিতে বেহেস্তর সর্দারদের উদ্দেশ্যে পালন করে বেহেস্তের অংশীদার হতে চেষ্টা করবেন নাকি তাঁদের রৌশানলে পরার মত করে দিনটি পালন করবেন। আল্লা কোরআনে “মুসলমান না হয়ে মরতে নিষেধ করেছেন” একাধিক আয়াতে। সুন্নি বা শিয়ার কথা বলেন নাই। যে বা যারা স্বার্থ হাসিলের জন্য বা যে গরজে শিয়া সুন্নী ভাগ করে মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন হাশরের ময়দানে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। এমনকি তাদের অনুসারীরাও রেহাই পাবেন না। বিশ্বনবীকে অনুসরন করে যে বা যারাই ইসলামের জন্য সত্য সঠিক কাজ করবেন সেটাই মুসলমানের কাজ হবে সুন্নি বা শিয়া হওয়ায় কিছু যায় আসবে না আল্লা বা রাছুল সা. এর। কারণ আবারও বলছি আল্লা রাছুল শিয়া সুন্নি ভাগ করেন নাই। একজন ঘুশখোর সুন্নি আর একজন নির্অপরাধ শিয়া বা বিধর্মী জ্ঞানীদের বিচারে কে উত্তম? ভুলে গেলে চলবে না হাশরের ময়দানে স্বার্থনেশীদের ফতোয়া কারোরই কোন কাজে আসবে না। যার যার হাত পা এবং শরীরের সমস্ত অঙ্গই স্বাক্ষী দিবে। এবং যারা নামায পড়েন তাদেরও মনে রাখা উচিৎ যখন নামায পড়েন তখন রাছুল সা. এর পরিবারের উপর দরুদ সালাম এবং ইব্রাহিম আ. এর উপর দরুদ সালাম পেশ না করলে নামাযই হয় না। সেখানে ১০ই মহরম এইসব পরিবারের কথা ভুলে গিয়ে মুসা আ. জন্য খুশী পালন করেন। এই সকল কর্মকান্ডের জন্য মানুষ মুনাফেকে পরিনত হয়। এইসব বিভ্রান্ত কর্ম করে তারা আবার বেহেস্ত আশা করে নোংরা স্বজনপ্রীতি করে বেহেস্তে যেতে চান। তারা ভুলে যান সেই বেহেস্তের সর্দাদের অনুমতি ব্যতীত ঢুকবেন কিভাবে? তাও মনে শান্তি হতো যদি মানুষ মুসা আ. এর কথা না বল খুশির জন্য বলত দুনিয়া সৃষ্টি বা আদম আ. এর জন্মের খুশিতে মহরম পালন করছেন অথবা ইব্রাহিম আ. এর অগ্নি হতে রক্ষা পাওয়ার খুশী পালন করছেন তাতেও মনকে প্রবোধ দেওয়া যেত। যেহেতু ইব্রাহিম আ. মুসলমানের জাতির পিতা। এবং আল্লা আদেশ করেছেন২২:৭৮#“তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক”। আমার ধারনা মুসা আ. নবীর কোন বংশধর যদি থাকতো তবে আমাদের আখেরী নবীর বংশধরের শোকেই শোক পালন করতেন।


মহান আল্লাহতায়ালা এই ফজিলতপূর্ণ দিনে আমাদেরকে আমলে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Post a Comment

If you learn something from our post please comment...

 
Top