সম্প্রতিক পোষ্ট

0

কোথা থেকে এলো এই ইয়াবা? ,  ইয়াবা কি  কিভাবে কাজ করে ,  ইয়াবার প্রতি আকর্ষণের কারণটা কি? , ইয়াবা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি,  নেশা ছাড়তে চাইলেও ছাড়া যায় না কেন,  ইয়াবার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইলে করনীয় কি, ইয়াবা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি,

ইয়াবা মূলত মায়ানমারের শান প্রদেশে পাহাড়ে ঘোড়াদের খাওয়ানো হতো।কেননা ঘোড়া পাহাড়ে কোন গাড়ি সহজে টানতে চাইত না, পরে ঘোড়াকে পাগলা করে দিতে বার্মিজরা এই ড্রাগ তৈরি করে। এর থাইল্যান্ডে নাম ম্যাড ড্রাগ, ইন্ডিয়াতে নাম ভুলভুলাইয়া আর বাংলাদেশে বাবা এছাড়াও নাজি, স্পিড, হিটলার্স ড্রাগ, চকোলি নামেও এটি পরিচিত। এই ঘোড়ার ট্যাবলেট পরবর্তীতে প্রচন্ড কায়িক শ্রম করে এমন মানুষরা নেয়া শুরু করে এবং এরপর এটা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের প্রষ্টিটিউটরা নিতে শুরু করে। বার্মা এর মূল তৈরির স্থান হলেও তারা কেবল এক্সপোর্ট করে, সেবনকারীর সংখ্যা সেখানে কম কারন তারা জানে জিনিসটা কি এবং কতটা খারাপ।

ইয়াবা কি? 
 ইয়াবা- মাদকটির মূল উপাদান মেথঅ্যামফিটামিন। একসময় যা সর্দি ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হতো কোনো কোনো দেশে। ব্যবহার করা হতো ওজন কমানোর চিকিৎসায়ও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ক্লান্তি দূর করতে ও সজাগ থাকতে সেনাদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল মেথঅ্যামফিটামিন। পরবর্তী সময়ে সাধারণ মানুষ বিশেষত শিক্ষার্থী, দীর্ঘযাত্রার গাড়িচালক ও দৌড়বিদেরা এটি ব্যবহার শুরু করেন।

 কোথা থেকে এলো এই ইয়াবা? 

 ধীরে ধীরে এর কুফল বা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদঘাটিত হতে থাকায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। তবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর উৎপাদন চলতেই থাকে। মেথঅ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে ব্যবহূত হতে থাকে মাদকদ্রব্য হিসেবে। থাইল্যান্ডে এই মাদকটির উৎপাদন হয় সবচেয়ে বেশি। ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশে। গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথেডিনের পথ ধরে বাংলাদেশেও এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মাদকটি। অনেকে একে বলে 'ক্রেজি মেডিসিন' বা পাগলা ওষুধ। অনেকের কাছে তা নাজি স্পিড বা শুধু স্পিড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশের অনেক এলাকায় এর লেনদেন হয় 'বাবা' নামে। হালের মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের কাছে এ মাদকটি সমধিক পরিচিত 'ইয়াবা' নামেই। ইয়াবা একটি থাই শব্দ। নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও ধরা হয়, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তী সময়ে ২০০০ সাল থেকে সীমান্তপথে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হয়ে তা দেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে। প্রথম দিকে উচ্চমূল্যের কারণে ইয়াবার প্রচলন সীমাবদ্ধ ছিল শুধু উচ্চবিত্ত ব্যক্তিদের মধ্যেই। পরে প্রচণ্ড উত্তেজক ও নেশাকারক এ ট্যাবলেটটির উপকরণ চোরাইপথে এনে দেশের ভেতরেই তা তৈরি করা শুরু হয়। দাম কিছুটা কমতে থাকে। ফলে উচ্চবিত্তের গণ্ডি ছাড়িয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত যুবক- যুবতীদের মধ্যেও ইয়াবার বিস্তার ঘটে।


 ইয়াবার  কি দিয়ে তৈরী? 

এবারে আসি ইয়াবা কি কি ভয়াবহ রাসয়নিক দিয়ে তৈরি! ইয়াবার মূল উপাদান মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন। মেথামফেটামিন জিনিসটা দিয়ে তৈরি একটা ট্যাবলেট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের জাগিয়ে রাখতে ব্যাবহার করা হত এবং ১৯৫০ এর দিকে জাপানে মেথামফেটামিন ব্যাপক ভাবে ব্যাবহৃত হয়েছে। বর্তমানে যে ইয়াবা ট্যাবলেট বিক্রি হয় তাতে মেশানো হয় হাইড্রোক্লোরিক এসিড, এসিটোন (যা মূলত নেইল পলিশ রিমুভার), রেড ফসফরাস, ব্যাটারির লিথিয়াম ও সালফিউরিক এসিড। আশা করি কেমিক্যাল গুলোর নাম শুনে কিছুটা ভয়াবহতার আঁচ পাওয়া যাচ্ছে।


ইয়াবার একশন ও কেন ভয়াবহ?

মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন হল দুটি মস্তিস্কের উত্তেজক পদার্থ। ইয়াবা সেবনে মুলত এই মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইন সেবনকারীকে বেপরোয়া করে দেয়।তালপাতার সেপাই নিজেকে মহাবীর আলেকজান্ডার ভাবা শুরু করে এবং যে কোন অপরাধ করার সিদ্ধান্তে যেতে তার বিবেক বাধা দেয়না।ইয়াবার ভয়ানক সাইড ইফেক্টঃবলা হয় যে একটা দুইটা ইয়াবা সেবন করলেই মস্তিস্কের কিছু ছোট রক্তনালী নষ্ট হয় এবং নিয়মিত করলে, খুব অল্প বয়সে ব্রেইন ষ্ট্রোক করে প্যারালাইজড বা চলাচলে অক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা ৯৫%। এছাড়া ওজন কমে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, হ্যালুসিনেশন, উন্মাদের মত আচরন, গোয়ার্তুমি এবং পুরুষত্ব হারানো ও বন্ধ্যত্ব হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। যে সব কেমিক্যালের কথা বললাম যা বাবাতে আছে তাতেই বোঝা যায় একশন কি হবে। পরিচিত কেউ সেবন করলে তাকে বলে দিতে হবে ৩৫-৪৫ এর মধ্যে একটা ষ্ট্রোক আর তিলেতিলে নিজের দেহ নিঃশেষ হওয়া দেখার জন্য তৈরি হতে থাকুন।

 ইয়াবার প্রতি আকর্ষণের কারণটা কি? 

 তরুণ-তরুণীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে মূল উপাদানের সঙ্গে মেশানো হয় আঙুর, কমলা বা ভ্যানিলার ফ্লেভার; সবুজ বা লাল- কমলা রং। ইয়াবা নামের ছোট্ট এ ট্যাবলেটটি দেখতে অনেকটা ক্যান্ডির মতো, স্বাদেও তেমনই। ফলে আসক্ত ব্যক্তিরা এর প্রচণ্ড ক্ষতিকর প্রভাবটুকু প্রথমে বুঝতে পারে না। একই কারণে এটি পরিবহন করা ও লুকিয়ে রাখাও সহজ। অধিকাংশ মাদকসেবী ট্যাবলেটটি মুখেই গ্রহণ করে। অনেকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের ওপর রাখা ট্যাবলেটের অপর প্রান্তে তাপ দিয়ে একে গলিয়ে ফেলে। এরপর সেখান থেকে যে বাষ্প বের হয়, তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করে। আবার ট্যাবলেটটি গুঁড়ো করে, পানিতে মিশিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে শিরাপথে সরাসরি রক্তেও ঢুকিয়ে দেয় অনেকে।

 কিভাবে কাজ করে ? 

 ইয়াবার আনন্দ আর উত্তেজনা আসক্ত ব্যক্তিদের সাময়িকভাবে ভুলিয়ে দেয় জীবনের সব যন্ত্রণা। তারা বাস করে স্বপ্নের এক জগতে। ইয়াবার প্রচণ্ড উত্তেজক ক্ষমতা আছে বলে যৌন- উত্তেজক হিসেবে অনেকে ব্যবহার করে এটি। ক্ষুধা কমিয়ে দেয় বলে স্লিম হওয়ার ওষুধ হিসেবে অনেকে শুরু করে ইয়াবা সেবন। ঘুম কমিয়ে দেয়, সারা রাতের পার্টির আগে ক্লান্তিহীন উপভোগ নিশ্চিত করতে অনেকের পছন্দ ইয়াবা।কিন্তু এই সাময়িক আনন্দের ট্যাবলেটটি যে তাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তা টের পাওয়ারও অবকাশ সে সময় তাদের থাকে না। প্রথমে কম ডোজে এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে ডোজ বাড়াতে হয়। আগে যে পরিমাণ ইয়াবা আনন্দ এনে দিত, পরে তাতে আর হয় না। বাড়তে থাকে ট্যাবলেটের পরিমাণ, ক্ষণস্থায়ী আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গও। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি কি? 

 রাত কাটে নির্ঘুম, ইয়াবা প্রতিক্রিয়ায় টানা সাত থেকে ১০ দিনও জেগে থাকতে বাধ্য হয় অনেকে। শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, মেজাজ হয় খিটখিটে, গলা-মুখ শুকিয়ে আসতে থাকে অনবরত। প্রচণ্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি বাড়তে থাকে। বাড়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। দীর্ঘদিনের আসক্ত ব্যক্তিরা উচ্চরক্তচাপের রোগীই হয়ে পড়ে। মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অহেতুক রাগারাগি, ভাঙচুরের প্রবণতা বাড়ে। পড়াশোনা, কর্মক্ষেত্র বা পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্ত ব্যক্তিরা বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। কারও কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। দৃষ্টিবিভ্রম, শ্রুতিবিভ্রম আর অস্বাভাবিক সন্দেহ প্রভৃতি উপসর্গ থেকে একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক ব্যাধিও দেখা দেয়। বেশি পরিমাণে নেওয়া ইয়াবা শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। আর যারা সিরিঞ্জের মাধ্যমে দেহে ইয়াবা প্রবেশ করায়, তারা হেপাটাইটিস বি, সি ও এইডসের মতো মারাত্মক রক্তবাহিত রোগের জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে।

 নেশা ছাড়তে চাইলেও ছাড়া যায় না কেন? 

 ইয়াবার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি আসক্ত ব্যক্তিরা এর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একবার ইয়াবা নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পর আবার না নিলে শরীরে ও মনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, ফলে বাধ্য হয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা আবার ফিরে যায় নেশার জগতে।

 ইয়াবার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাইলে করনীয় কি? 

 তবে হ্যাঁ, যারা আবার ফিরে পেতে চায় স্বাভাবিক সুস্থ জীবন, তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এমন নয় যে, আসক্ত ব্যক্তিরা আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। এ জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আসক্ত ব্যক্তিদের আশার আলো দেখাচ্ছে, তারা ফিরে যেতে পারছে মাদকমুক্ত জীবনধারায়। ওষুধ, সাইকোথেরাপি ও অন্যান্য উপায়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনযাপন পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়, পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় তার আগের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, যা তাকে মাদকাসক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করেছিল।এতে মানসিক রোগ চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীর যেমন ভূমিকা রয়েছে, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে পরিবার, স্বজন আর প্রকৃত ভালো বন্ধুরও। একজন নেশাসক্ত ব্যক্তি সবার সম্মিলিত সহযোগিতায়ই আবার ফিরে পেতে পারে মাদকমুক্ত সুস্থ জীবন। 

ইয়াবা প্রতিরোধে আমাদের করণীয় কি? 

 তবে ইয়াবার আগ্রাসন থেকে দেশের যুবসমাজকে রক্ষা করতে প্রয়োজন সামগ্রিক প্রতিরোধ। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যেসব পথে দেশে ইয়াবা ঢুকছে, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। দেশের ভেতর ইয়াবার উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লে তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ইয়াবার কুফল সম্পর্কে সবাইকে বিশেষত উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে।

Post a Comment

If you learn something from our post please comment...

Emoticon
:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top